অশান্তির মাঝেও শান্তির বার্তাবাহক এরদোগান

কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তিতে রাশিয়াকে ফিরিয়ে আনতে গত সোমবার টানা তিন ঘণ্টা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তবে এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক শেষে কোনো চুক্তিতে সই করেননি পুতিন। অর্থাৎ বলা চলে এরদোগানের এ প্রচেষ্টা অনেকটাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

জুলাইয়ে রাশিয়া শস্যচুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর এরদোগান বেশ কয়েকবার বলেছিলেন, পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করলেই মস্কো শস্যচুক্তি নবায়ন করতে রাজি হতে পারে। পরিশেষে এরদোগানের এ কথা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

বৈঠকে এরদোগানকে শস্যচুক্তি থেকে রাশিয়ার বের হয়ে যাওয়ার কারণ বোঝাতে পেরেছেন পুতিন। কেননা বৈঠকের পরই সংবাদ সম্মেলনে এরদোগান বলেছিলেন, প্রতিপক্ষ ইউক্রেনের উচিত আরও নরম হওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, রাশিয়ার কৃষি রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেই মস্কো চুক্তি নবায়ন করবে।

রাশিয়া আগেও অনেকবার বলেছে, শস্যচুক্তিতে ফিরে আসার জন্য রাশিয়ার শর্তগুলো হলো— রাশিয়ার সার, কৃষি ও খাদ্যপণ্য রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা যেসব নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত রয়েছে, সেসবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেন ব্যবস্থা সুইফটে রাশিয়াকে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং কৃষি ও খাদ্যপণ্য রপ্তানি থেকে উপার্জিত অর্থ ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা আছে, সেসবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।

সংঘাত নিরসন ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

এরদোগান-পুতিন বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়াদি ছাড়াও এ বৈঠকের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে; যা তুলে ধরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-

প্রথমত, এরদোগান ও অন্যান্য তুর্কি কর্মকর্তাদের নিরলস কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। তারা শস্যচুক্তি নবায়ন করতে এবং ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে আলোচনার জন্য নিরলসভাবে সমাধান খুঁজছেন। সরাসরি শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে এরদোগানের কূটনীতি শস্য রফতানি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

দ্বিতীয়ত, তুরস্কের অন্যতম একটি লক্ষ্য হলো তার নিকটবর্তী প্রতিবেশীর চলমান সংঘাতের অবসান ঘটানো। এর জন্য একটি কূটনৈতিক সমাধান বের করার চেষ্টা করছে দেশটি। শস্যচুক্তি একটি কেন্দ্রবিন্দু হলেও এরদোগান পরস্পর বিরোধী পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করে সংঘাত নিরসন করতে চাইছেন। এর আগে তুরস্কের আনাতোলিয়া ও ইস্তান্বুলে সংঘাত নিরসনের জন্য আলোচনা হয়েছে।

তৃতীয়ত, শস্য চুক্তির আলোচনার মধ্যেই পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে আঙ্কারা ও মস্কোর মধ্যে কৌশলগত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরেন এরদোগান। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চাভিলাষী ১০০ বিলিয়ন ডলার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা থেকে শুরু করে পর্যটন এবং তুরস্কের পারমাণবিক শক্তি উদ্যোগের যৌথ উদ্যোগ। শস্যচুক্তি আলোচনা করতে গিয়ে নিজেদের জাতীয় স্বার্থের কথা ভুলে যায়নি আঙ্কারা।

রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল ও ইউক্রেনে আক্রমণকে সমর্থন করে না তুরস্ক। এটাও স্পষ্ট যে, তুরস্ক ও রাশিয়া সিরিয়ায় বিরোধী পক্ষ। এমন মতবিরোধপূর্ণ সম্পর্কের পরও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ রক্ষায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এরদোগান। এর মাধ্যমে শান্তির বার্তাবাহক হিসেবে বিশ্বদরবারে নিজেকে তুলে ধরেছেন এরদোগান।

আশা করা যাচ্ছে, আসন্ন জি-২০ সম্মেলন এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পশ্চিমা নেতাদের সামনে কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তিতে ফিরে আসতে পুতিনের দাবিগুলো তুলে ধরবেন এরদোগান। এরপর কোনো না কোনো দফারফা নিশ্চয়ই হবে।

সূত্র: ডেইলি সাবাহ

আরও পড়ুন...