আসামির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় এবার ওসি প্রত্যাহার


পিবিএ,বরগুনা: বরগুনার আমতলী থানার হাজতে সন্দেহভাজন আসামি শানু হাওলাদারের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকালে পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে প্রত্যাহারের বিষয়ে জানানো হয়। ওসি আবুল বাশারকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এরআগে, একই ঘটনায় আমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি ও ডিউটি অফিসার মো. আরিফুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, থানায় আসামির মৃত্যুর ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শুরু করেছি। অল্প দিনের মধ্যেই তদন্ত শেষ হবে। তিনি আরও বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে আমতলী থানার ওসি আবুল বাশারকে প্রত্যাহার করে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বরগুনা সদর) মো. মহব্বত আলী ও সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী সার্কেল) সৈয়দ রবিউল ইসলাম।

এদিকে ওসিকে প্রত্যাহারের ঘটনায় স্থানীয়রা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ ও দোষীদের বিচার দাবি করেছেন।

ওসি আবুল বাশারের প্রত্যাহারের ঘটনায় সন্তোষ জানিয়ে শানু হাওলাদারের ছেলে সাকিব হোসেন বলেন, ‘দ্রুত তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছি। তিনি টাকা না পেয়ে আমার বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। আমি হত্যাকারী ওসির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রামে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর ইব্রাহিম নামের একজনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওই হত্যা মামলার এজাহারে নিহত শানু হাওলাদারের সৎভাই মিজানুর রহমান হাওলাদারকে আসামি করা হয়। ওই আসামির ভাই শানু হাওলাদারকে গত সোমবার (২৩ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমতলী থানা পুলিশ ধরে নিয়ে আসে। শানুর ছেলে মঙ্গলবার থানায় এসে তাকে খাবার দিয়ে যান। তবে বুধবার পরিবারের লোকজন এসে শানু হাওলাদারের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে পুলিশ দেখা করতে দেয়নি। উল্টো খারাপ আচরণ করে তাদের তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন শানুর স্বজনরা। বৃহস্পতিবার সকালে থানা থেকে খবর দেওয়া হয় শানু হাওলাদার পরিদর্শকের (তদন্ত) কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

তবে পরিবারের অভিযোগ, শানুকে ধরে নিয়ে আসার পরে আমতলী থানা ওসি আবুল বাশার ও পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি তার পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করে। শানুর ছেলে ১০ হাজার টাকা ওসিকে দেন। দাবি করা বাকি টাকা দিতে না পারায় শানুকে থানা হাজতে রেখে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা।

শানু হাওলাদারের ছেলে সাকিব হোসেন বলেন, ‘বিনা অপরাধে আমার বাবাকে পরিদর্শক (তদন্ত) ধরে এনে তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমার বাবাকে নির্যাতন করেছে। বাবার ওপর নির্যাতন যাতে বন্ধ হয় সেজন্য মঙ্গলবার দুপুরে আমি তাকে ১০ হাজার টাকা দিই। কিন্তু ওই টাকায় ওসি তুষ্ট হয়নি। নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। বুধবার সকালে আমি বাবার সঙ্গে দেখা করতে থানায় আসি। কিন্তু আমাকে দেখা করতে না দিয়ে ওসি আবুল বাশার ও পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি গালাগাল করে তাড়িয়ে দেয়। ওসি বলে, টাকা নিয়ে আসো, তারপর দেখা করতে দেবো।’

তবে ঘটনার পর ওসি মো. আবুল বাশার দাবি করেছিলেন, ‘শানু হাওলাদার বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে ওয়াশ রুম থেকে ফিরে এক ফাঁকে হাজতখানার ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।’ তবে হাজতখানায় কোনও ফ্যান নেই সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যের পর তিনি পূর্বের কথা পাল্টে বলেন, ‘পরিদর্শক (তদন্ত) মনোরঞ্জনের কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
পিবিএ/মো: সাগর আকন/এএম

আরও পড়ুন...