
তুহিন হোসেন,পাবনা: শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন স্বরুপ বেত্রাঘাত বা মারপিট না করার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে অমান্য করে ঈশ্বরদীতে ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী রামিম হোসেন (৮) বেত্রাঘাতে আহত করার ঘটনা ঘটেছে।
গত রবিবার ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নের ৪১ নং চরমিরকামারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মধ্যহ্ন বিরতির পর ছুটির পূর্বে বিজ্ঞাপন ক্লাসে বেত্রাঘাতের এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সহকারী শিক্ষক ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট অভিযোগ করা হলেও গত দুইদিনেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু মোস্তফা কামাল। এই কারণে শিক্ষকের শাস্তির দাবীতে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আহত শিক্ষার্থী রামিম হোসেনের বাবা সজিব হোসেন।
গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে সরেজমিনে ৪১ চরমিরকামারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ৩য় শ্রেণীর কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী লামিয়া ও নির্ঝরসহ একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রামিম হোসেন ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তার ক্লাস রোল ৩। ঘটনার দিন বিজ্ঞান ক্লাসে পড়া না পারায় সহকারী শিক্ষক ফরহাদ হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে (রাগ করি) রামিমকে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মেলা মারে। রামিম হাউমাউ করে কাঁদে। তার স্যার মারতেই থাকে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম মিলন জানান, শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এটা ঠিক হয়নি। তবে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করা হয়েছে বলে শুনেছি।
আহত শিক্ষার্থী রামিম হোসেনের বাবা সজিব হোসেন অভিযোগ করে জানান, ঘটনার সময় শ্রেণীকক্ষে সহকারী শিক্ষক ফরহাদ হোসেন অজ্ঞাত কারণে ধমকের স্বরে বাচ্চাদের পড়া ধরে। এতে রামিম ভয়ে পড়া বলতে পারেনা। এতে শিক্ষক ফরহাদ ক্ষিপ্ত হয়ে রামিমকে শরীরের নিচের অংশে বেধড়ক বেত্রাঘাত করে আহত করে। বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে জানানোর পরও পদক্ষেপ গ্রহন করায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ সেন্টু মালিথা জানান, ঘটনাটি জানতে পেরে আমি নিজেও মর্মাহত হয়েছি। খবরটি প্রকাশ হওয়া স্থানীয়ভাবে তীব্র অসন্তোষ্ট দেখা দেয়। এরপর থানায় অভিযোগ করায় শিক্ষক ফরহাদ তার ভুল স্বীকার করে রামিমের পরিবারসহ এলাকাবাসীর নিকট ক্ষমা চেয়েছেন। বিষয়টি আমরা ঘরোয়া ভাবে মিমাংসা করে দিয়েছি।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক ফরহাদ হোসেন ঘটনার পর থেকেই দুই দিনের ছুটিতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাঁর বক্তব্য নিতে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে রিং দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু মোস্তফা কামাল জানান, শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করাটা খুবই দুঃখজনক। এটা ঠিক হয়নি। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তাঁরা কি পদক্ষেপ নেবেন সেটা তাঁদের বিষয়।
ঈশ্বরদী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিইও) মোঃ আসাদুজ্জামান ফোন রিসিভ করেননি। তবে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি সভাপতি উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) গোলাম মোস্তফা জানান, ৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতে আহত করার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। এটা খুবই অন্যায়। শিক্ষার্থীদের মারপিট করার হুকুম শিক্ষকদের দেওয়া হয়। আমাদের শিক্ষা সপ্তাহ কর্মসূচি চলছে। আগামী সপ্তাহে এই বিষয়ে তদন্ত করে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।