একদিনের বাচ্চা পুঁতে ফেলতে হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হাঁসের খামারগুলো

সনজিত কর্মকার,চুয়াডাঙ্গা: দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চুয়াডাঙ্গার হাঁসের খামার। ফলে, প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে হ্যাচারি মালিকের। বাচ্চা বিক্রি, মাছের খাবার ও মাটির নিচে পুতে ফেলতে হয় একদিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা গুলো। নষ্ট হয়েছে কয়েক লাখ ডিম। এসব কারণ তিন মাসে হাঁসের খামারটিতে লোকসান গুনতে প্রায় ১ কোটি টাকা।

হাঁসের খামারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ভাবে চলতে থাকলে বড় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হতে পারে খামারটির। সরকারী সহযোগিতা পেলে খামারটির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুলপালা গ্রামে জাকির এন্ড ব্রাদার্স মিক্সড এগ্রো ফার্ম এন্ড হ্যাচারির কার্যক্রম চলছে। সেখানে ৪৮ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে এ খামার। বেইজিং ও খাঁকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস রয়েছে খামারে। বেইজিং হাঁস ৫ হাজার ও খাঁকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। খামারে হাঁস রাখার জন্য ১৬টি শেড ও হ্যাচারিতে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য কয়েক ধরনের মেশিন রয়েছে।

হাঁসের খামারে ডিম ও বাচ্চা উৎপাদনের উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত। এ সময় দেশে ডিম ও বাচ্চার চাহিদা থাকে অনেক বেশি। ৩০ হাজার হাঁস থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৬-১৮ হাজার ডিম পাওয়া যায়। প্রতি মাসে গড়ে ৫ লাখ বাচ্চা উৎপাদন হয়। যা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়। এখন করোনা ভাইরাসের কারণে ডিম ও একদিনের বাচ্চা বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। টানা ২ মাসের বেশি সময় দেশে লকডাউন থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই থেমে যায়। পরিবহন সংকটের কারণে চাহিদা মত সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। দেশে করোনা প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় হাঁস পালনে আগ্রাহ হারিয়ে ফেলে।

৩ মাসে হ্যাচারি থেকে প্রায় ১৫ লাখ একদিনের বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত বাচ্চার মধ্যে ৫ লাখ বিক্রি করতে পেরেছে। তাও আবার প্রতিটি বাচ্চা বিক্রি করা হয় ৫-৭ টাকা দরে। যেখানে প্রতিটি বাচ্চা উৎপাদন থেকে বিক্রি পর্যন্ত ২০-২২ টাকা খরচ হয়। বাজারে বিক্রি হয় ৩০-৩৫ টাকায়। ১০ লাখ বাচ্চা অবিক্রিত থাকায় মাটিতে পুঁতে ফেলা ও মাগুর মাছের খাবার হিসাবে দেওয়া হয়। ১৫ লাখ বাচ্চায় লোকসান হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকার মত।

হাঁসের বাচ্চা বিক্রি করে জেলায় প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হত নিয়মিত। তারা বেকার হয়ে অসহায় জীবন যাপন করছে পরিবার পরিজন নিয়ে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে খামারের বেশ কয়েক জন লোক কাজ থেকে বাদ দিতে হবে।

আলমডাঙ্গা কুলপালা গ্রামের হাঁসের বাচ্চা বিক্রিতা রমজান আলী জানান, প্রতিদিন ৩শ মত বাচ্চা গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করতাম। করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ কিনতে চাচ্ছে না। হাঁসের বাচ্চা বিক্রি করে প্রতিদিন আয় হত ১২শ-১৫শ টাকা। সংসার ভালই চলতো। এখন কর্মহীন হয়ে বাড়িতে রয়েছে। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
খামারের কাজে নিয়োজিত আনারুল জানান, ডিমগুলো সটিং করে তারিখ বসিয়ে ২৫ দিন মেশিনের মধ্যে দিয়ে রাখা হবে। তারপর মেশিন থেকে বের করে ৩ দিন হ্যাচারীতে থাকবে। এভাবে আমরা ২৮ দিন পর বাচ্ছা ফুটানো হয়।

জাকির এন্ড ব্রাদার্স মিক্সড এগ্রো ফার্ম এন্ড হ্যাচারির ম্যানেজার ইয়াছিন আলী জানান, আমাদের এই খামারে ৩০ হাজার হাঁস রয়েছে। এর থেকে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ হাজার ডিম পায়। এই ডিম দিয়ে মেশিনের মাধ্যমে ৬০-৭০ হাজার বাচ্চা ফুঁটানো হয়। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক ডিম ও বাচ্চা মাকের্টি বিক্রি করতে পারিনি। অধিকাংশ বাচ্চা পুকুরে ও মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছে। লডডাউন শিথিল হওয়ায় পর্যাক্রমে আবার প্রোডাকশন শুরু করেছি।

জাকির এন্ড ব্র্রাদার্স মিক্সড এগ্রো ফার্ম এন্ড হ্যাচারির মালিক জাকির হোসেন জানান, বেইজিং ও খাঁকি ক্যাম্বেল, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী ও মাছ নিয়ে আমাদের কৃষি প্রোজেক্ট। এই প্রেজেক্টটি ৯০ বিঘা জমির উপর। প্রতি বছর এই প্রেজেক্ট থেকে ভালো পরিমাণ লাভাংশ আসে। তাছাড়ও এখানে অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থা করা হয়েছে। দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমাদের লোকসানে পরিমাণ কাটিয়ে উঠতে পারবো বলে মনে করি।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, জাকিরের হাঁসের খামার থেকে প্রতিমাসে চার লক্ষ বাচ্চা উৎপাদন হয়। তার উৎপাদিত খামারের বাচ্চা দেশে কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করেন। করোনার কারণে খামারটির লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়েছে। বাচ্চা ও ডিম বিক্রি কম হচ্ছে। সরকারী ভাবে সহযোগিতা করা হয় কি না সেটা চিন্তা করা হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

পিবিএ/এমআর

https://youtu.be/FpbIe4m0rlI

আরও পড়ুন...