করোনায় মানুষের পাশে দাঁড়াল বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান

পিবিএ,ঢাকা: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন মহামারি রূপ নিয়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশেও। সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে সরকার প্রস্তুতি নিলেও এককভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। তাইতো দেশের সঙ্কটকালীন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি শিল্প গ্রুপ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা উপকরণ, ওষুধ, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ও মাস্ক সরবরাহ করছে বিনামূল্যে। অনেকে সচেতনায় বিভিন্ন পরামর্শের পাশাপশি দিচ্ছে আর্থিক সহায়তা। সঙ্কট মোকাবিলায় নিচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের মতো এ মহামারি সরকারের একার পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবই এগিয়ে এসেছেন অনেকে। পাশাপাশি অন্যদেরও সাধ্যমতো এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

করোনাভাইরাস বিস্তাররোধে নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দেশের বেসরকারি শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। সরকারকে বিভিন্ন সহযোগিতার পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করছে এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে বিনামূল্যে বিতরণ করছে করোনা প্রতিরোধের আনুষঙ্গিক পণ্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ শুরু থেকেই মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে। আমাদের বিভিন্ন স্টেক হোল্ডার, কর্মী, জরুরিভিত্তিতে যারা মাঠে কাজ করছেন এমন লোকদের মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক উপকরণ দিচ্ছি। এছাড়া করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সংগঠনকে আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা করছি।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে যে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। সেখানে প্রয়োজনীয় খাদ্যের ব্যবস্থা করব। এছাড়া তাদের পণ্য বা উপকরণের প্রয়োজন হলে আমারা তা সরবারহ করর।

নাটোরে গ্রুপের নিজস্ব হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে জানিয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এ পরিচালক জানান, সেখানে আইসিইউ ব্যবস্থাসহ অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ইমারজেন্সি রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ, ভেন্টিলেশন সিস্টেমসহ প্রয়োজনীয় সেবা তাৎক্ষণিক দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কাজ শেষ হয়ে গেছে। আমরা খুব শীঘ্রই সেখানে রোগীদের উন্নতমানের চিকিৎসা দিতে পারব। এজন্য বিভিন্ন অভিজ্ঞ লোক খুঁজছি। যারা এখানে ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারবে।

এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সহযোগিতার জন্য আমরা কাজ করছি এখন পিপিই সঙ্কট রয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে যদি এসব পণ্য সামগ্রী থাকে তাহলে আমাদের জানাবেন; আমরা নিজ খরচে সেগুলো কিনে হাসপাতালগুলোতে পৌঁছে দেব। এছাড়া এই সঙ্কটকালীন সময়ে যদি কোনো হাসপাতাল, বেসরকারি সংস্থা, অথবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কোনো সহযোগিতা লাগে তাহলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ তাদেরকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি জানান।

দেশের এ সঙ্কটে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, আমরা ব্যবসা করছি। জনগণ-দেশ বাঁচলে আগামীতেও ব্যবসা করব। তবে এখন উচিত ব্যবসার চিন্তা ঝেড়ে ফেলে কীভাবে দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসতে পারি। কীভাবে মানুষকে সহায়তা করা যায় এবং কীভাবে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারি সেই চেষ্টা করা। এজন্য সকল ব্যক্তি ও বিশেষ করে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসা জরুরি।

বেক্সিমকো গ্রুপ

চিকিৎসকদের সুরক্ষার্থে ছয় হাজার বিশেষ গাউন দেবে বেক্সিমকো গ্রুপ। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ক আলোচনাকালে কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এ কথা জানান।

করোনাভাইরাসের এ মহামারির সময়ে এগিয়ে এসেছে বেক্সিমকো গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে থেকে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে ছয় হাজার বিশেষ গাউন প্রস্তুত করা হয়েছে। ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে এসব গাউন দেয়া হবে। এছাড়াও বেক্সিমকো ও আইএফআইসি ব্যাংক যৌথভাবে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) দেবে। ১৫ কোটি টাকার মূল্যের এ পিপিই বিশেষ ব্যবস্থায় আমদানি করা হচ্ছে। এসব পিপিই পণ্য আইইডিসিআরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে।

সামিট গ্রুপ

বিদেশফেরত যাত্রীদের হেলথ স্ক্রিনিং করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পাঁচটি থার্মাল স্ক্যানার দিয়েছে বেসরকারি সামিট গ্রুপ। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান এ সময় বলেন, এই সঙ্কটের সময় বিশ্বমানের থার্মাল স্ক্যানারগুলো সরবরাহের মাধ্যমে দেশের সেবার সুযোগ পাওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ। সরকার চাইলে আরও সহযোগিতা করতে প্রস্তত আছি বলে তিনি জানান।

ব্র্যাক

নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি সংস্থা ‘ব্র্যাক’। এ বিষয়ে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি মোকাবিলায় ব্র্যাক অতিদ্রুত তার সমর্থ বৃদ্ধির সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষের কাছে স্বাস্থ্যবার্তা পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মাস্ক তৈরি করতে শুরু করেছি । এখন আমরা দেশেই পিপিই বা সুরক্ষা পোশাক তৈরির বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি।

তিনি বলেন, আমাদের ৪৫ হাজার স্টাফ, ৫০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী সারাদেশে কমিউনিটি লেভেলে কাজ করবে। পাশাপাশি ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমেও একটা ক্যাম্পইনে যাচ্ছি। এখন শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না, সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে।

তিনি জানান, ব্র্যাক তার ঋণ কর্মসূচির কিস্তি জমাদান ২৪ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেও সংক্রমণ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবার্তা ও সাবানসহ অন্য উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্যাকেট তরল সাবান, স্যানিটাইজার ও সাবান বিতরণ, সিটি করপোরেশনগুলোর সহযোগিতায় শহরের বিভিন্ন বস্তি এলাকা এবং জনসমাগমস্থলে হাত ধোয়ার সুবিধা ও গণপরিবহনে জীবাণুনাশক প্রয়োগের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।

যমুনা গ্রুপ

করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার বেড়েছে। বাজারে তৈরি হয়েছে সঙ্কট। প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে এগিয়ে এসেছে যমুনা গ্রুপ।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বের সব দেশের মতো আমাদের দেশেও জীবাণুমুক্ত থাকার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা এবং সরবরাহের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ ঘাটতি জরুরি ভিত্তিতে পূরণের জন্য আমরা অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করব। বাজারের সর্বনিম্ন মূল্যে ১০০ মিলির বোতল ৬০-৭০ টাকায় এবং ২৫০ মিলির বোতল ১৪০ টাকায় বাজারজাত করার পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

রিহ্যাব

এদিকে জাতীয় এ দুর্যোগে প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠন। সঙ্কটময় সময়ে করোনা শনাক্তের কিট কিনতে আর্থিক সহায়তা দেবে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব)।

সংগঠনটির সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল জানান, সরকারকে আর্থিক সহায়তা হিসাবে কিট কেনার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে ২৫ লাখ টাকা দেয়া হবে। আজকেই (বুধবার) বোর্ডে এটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশের এ পরিস্থিতিতে সরকারের পাশে থেকে সহায়তা করা জরুরি। যারা এগিয়ে এসেছে তাদের ধন্যবাদ দিচ্ছি পাশাপাশি অন্যরাও সাধ্যমতো সহযোগতিার হাত বাড়িয়ে দেবে এটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...