পিবিএ,পটুয়াখালী: করোনা ভাইরাস এর প্রভাবে প্রান হানির অশনি সংকেতে মানুষ ঘরবন্ধী হওয়ায় পটুয়াখালী জেলা শহর এখন ভুতুরে শহরে পরিনত হয়েছে। মানুষ সতর্ক হওয়ায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ অনেকটা সম্ভব হচ্ছে এমনটাই ধারনা করছেন সচেতন মহল। তবে দূর্ভোগে পরেছে পটুয়াখালীর সাধারণ রোগীরা। খেয়া, যাত্রীবাহী বাস, অটোরিক্সা বন্ধ থাকায় দূর-দুরান্ত থেকে করোনা ভাইরাস এর উপসর্গ ছাড়াও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীরা পটুয়াখালী শহরে আসতে পারছে না। পটুয়াখালী জেলায় চিকিৎসা সেবার মান উন্নত বিধায় গলাচিপা, কলাপাড়া, দুমকি উপজেলার সাধারণ রোগীরা পটুয়াখালীর বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। কিন্তু শহরের অধিকাংশ বেসরকারী হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা ভোগান্তিতে পরেছে। গলাচিপা উপজেলার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রী সিজারের রোগী। পটুয়াখালী ফরচুন হাসপাতালে অপারেশন করার কথা ছিলো। ফরচুর হাসপাতালে যোগাযোগ করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের সার্জারির চিকিৎসক ছুটিতে আছেন। ফলে গলাচিপার স্থানীয় হাসপাতালেই সিজার করতে হচ্ছে তাকে। পটুয়াখালী এ্যাপোলো হাসপাতালে রাত ১১ টায় এক রোগীর স্বজনকে খুব চিন্তিত অবস্থায় দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “ বিকাল থেকে কয়েকটা হাসপাতালে আমার আম্মাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। কোথাও বলে ডাক্তার নাই, কোথাও বলছে ভর্তি করে রাখতে। শেষে এই এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্তু রাত ১১ টা বেজেছে, এখনও ডাক্তার আসেননি। পটুয়াখালীর সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী রেবা আক্তার বলেন, কলেজ ছুটি হলেও যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় গ্রামের বাড়ী রাঙ্গাবালী উপজেলায় আমরা কয়েকজন বান্ধবী যেতে পারিনি। গত ২ দিন আগে দুপুরে আমার প্রচন্ড পেটে ব্যাথা অনুভব হলে আমি সদর হাসপাতালে যাই। কিন্তু সেখানে আবাসিক কোন ডাক্তার পাইনি। সদর হাসপাতালের ল্যাব রুমে যেয়ে দেখি ল্যাব রুম তালাবদ্ধ। পরে আমার বান্ধবীর পরামর্শে ফার্মেসী থেকে ঔষধ কিনে খেয়েছি।
পটুয়াখালীর ফরচুন, এ্যাপোলো, সেন্ট্রাল, লাইফকেয়ার, মুক্তি, হেলথ কেয়ারসহ বেসরকারী হাসপাতাল গুলো ঘুরে দেখা গেছে রোগীর উপস্থিতি একদম কম। বেশিরভাগ হাসপাতালে চিকিৎসক ছুটিতে আছেন। স্টাফ এবং নার্সদের গায়ে দেখা যায় নি কোন সুরক্ষা পোশাক। এছাড়াও সম্পূর্ন বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক বিভাগ। শহরের বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো তালাবদ্ধ রয়েছে ২৬ মার্চ থেকে। পটুয়াখালী সিটিজেন হেলথ কমপ্লেক্স এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আসাদুজ্জামান খান বলেন, সরকারী ভাবে আমরা কোন সুরক্ষা পোষাক পাইনি। আমাদের স্টার্ফ নার্সদের জীবনের ভয় আছে। তারা কাজে আসতে চাচ্ছে না। তাই বর্তমানে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রেখেছি। শহরের বেসরকারী হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রয়োজনীয় পিপিআই না থাকায় অধিকাংশ হাসপাতালের চিকিৎসক নার্সরা স্বেচ্ছায় ছুটি কাটাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী সদর হাসপাতালের ল্যাব সহকারী জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করছি যাতে সাধারন রোগীদের দ্রুত সেবা দেয়া যায়। তবে পর্যাপ্ত পিপিই পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে পৌছায়নি। আমরা পিপিই হাতে পেলে রোগীদের সেবার মান আরও বৃদ্ধি করতে পারবো।
বেসরকারী হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে পটুয়াখালী সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, রোগীদের যাতায়াত সমস্যার কারনে দূর দুরান্তের রোগীর উপস্থিতি কম। সাধারন রোগীরা হাসপাতালে ভাইরাসের ভয়ে আসতেও চাচ্ছেন না। তাই অনেক বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকরাও ছুটি কাটাচ্ছেন। তবে আমরা সকল রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। করনার মহামারী কেটে গেলে চিকিৎসা সেবার মান আবার বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে পটুয়াখালীতে ইতিমধ্যে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান পিপিএম এর নির্দেশনায় বিদেশ ফেরত মানুষের অনুসন্ধান এবং চিহ্নিত প্রবাসীদেরকে হোম কোয়ারান্টাইনে রাখার এবং তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সরবরাহ করে যাচ্ছেন। পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ পৌর শহরকে দূষনমুক্ত করার জন্য সড়ক সমূহসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে জীবানুনাশক পানি স্প্রে করেছেন। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার ও সদর ইউএনও লতিফা জান্নাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনগনকে সচেতনতার পাশাপাশি অক্ষম দরিদ্র শ্রেনীর মানুষের মাঝে মাস্ক ও খাদ্য দ্রব্য সরবরাহ করছেন। সকল সাধারন রোগীরা যাতে চিকিৎসা সেবা পেতে পারে তাই র্যাব-৮ এর সহযোগীতায় পটুয়াখালীর সকল বেসরকারী হাসপাতালে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রোগীদের ভোগান্তির কথা ভেবে এবং সাধারন রোগীরা যেন দ্রুত চিকিৎসা সেবা পেতে পারে তার জন্য সকল বেসরকারী হাসপাতালে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সাধারন মানুষ।
পিবিএ/সুনান বিন মাহাবুব/এএম