
মোঃরিফাতুন্নবী রিফাত,গাইবান্ধা: প্রাচীন স্থাপত্য নকশা ও আরবী হরফ মুদ্রিত ছয় ফুট দৈর্ঘের মসজিদকে ঘিরে মানুষের আগ্রহের কোন শেষ নেই। কে কখন এটি নির্মাণ করেছেন তার সঠিক কোন তথ্য নেই। তবে এলাকায় জনশ্রুতি আছে সাতশ বছর আছে এক রাতে অলৌকিক ভাবে সৃষ্টি হয়েছে মসজিদটি। বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংস্কারের মাধ্যমে মসজিদটিকে এখনও নামাজ আদায় করা সম্ভব বলে দাবী স্থানীয়দের।
এতক্ষন যে মসজিদটির কথা বলছিলাম সেটি কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরশহরের নুনিয়াগাড়ি গ্রামে। এর পূর্বে রংপুর- ঢাকা মহাসড়ক ও পশ্চিম পাশ দিয়ে গেছে পলাশবাড়ী- ঘোড়াঘাট সড়ক। দুই সড়কের ঠিক মাঝ দুরত্বে নুনিয়াগাড়ী গ্রামের বুকচিড়ে নির্মিত পিচঢালা সড়কের দক্ষিনে অবস্থিত ঐতিহাসিক এ মসজিদটি।
পলাশবাড়ী জিরো পয়েন্ট চৌমাথা মোড় থেকে মসজিদটির দুরত্ব আধাকিলোমিটার। এটি দেশের সবচেয়ে ছোট এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ যা প্রাচীন ইসলামিক ঐতিহ্যের এক অন্যন্য নিদর্শন। যা কালের সাক্ষী হয়ে আজএ দাঁড়িয়ে আছে।

এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। অন্তত: আড়াইশ বছরের পুরনো এ মসজিদটি এক কক্ষ বিশিষ্ট। এর উপরিভাগে একটি গম্বুজ এবং চার কোণায় রয়েছে চারটি পিলার। প্রাচীন এ মসজিদটিতে এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারেন ইমামসহ চার থেকে পাঁচজন। মসজিদটির অভ্যন্তরে নামাজের জায়গা রয়েছে দৈর্ঘে- প্রস্তে মাত্র ছয় ফুট। স্থানীয় কেরামত উল্লাহ মন্ডলের ছেলে কাদিরবক্স মন্ডলেরর নামে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভূক্তি হয়েছে। কিন্তু মসজিদটির নাম নিয়ে রয়েছে বিতর্ক।
এলাকাবাসীসহ তাঁর বংশধরেরা বলছেন, তিনি এটি নির্মাণ করেননি। নুনিয়াগাড়ি গ্রামের প্রবীন বাসিন্দা ও মসজিদ কমিটির সভাপতি রেজানুর রহমান ডিপটি বলেন, ধারণা করা হয় এটি নবাব সুজা-উদ- দ্দৌলার আমলের। বিভিন্ন সময় স্থানীয় ও সরকারি ভাবে মসজিদটির ইতিহাস উদঘাটনের চেষ্টা চালানো হয়েছে। ১৯৯১ সালে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্বে আসেন আব্দুল মালেক।
তৎকালিন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক ছিলেন আব্দুর সবুর। তারা মসজিদটি সরেজমিন পরিদর্শণ করেন এবং এটির ইতিহাস উদঘাটনের জন্য স্থানীয়দের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির সদস্যরা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের মাস্তা এলাকার প্রাচীন লাল মসজিদ ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর এলাকার প্রাচীন সৌর মসজিদ দেখে ধারণা করা হয় এটি নবাব সুজা-উদ- দ্দৌলার আমলের। কারণ নবাব সুজা-উদ- দ্দৌলার আমলে নির্মিত ওই দুটোর হুবহু আদাল-অনুকরণে তৈরী করা হয়েছে পলাশবাড়ীর প্রাচীন এই একগম্বুজ বিশিষ্ট সবচেয়ে ছোট মসজিদটি।
তবে এর নাম নিয়ে ভিন্নমত প্রদান করেন তিনি। মন্ডল পরিবারের সদস্য আব্দুল মতিন মন্ডল জানান, মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য জেলা-উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়।
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ২০১৩ সালের ২ জুন মসজিদটিকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রনালয়। ফলে মসজিদটি রংপুর বিভাগের মধ্যে প্রাচীন স্থাপত্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তিনি আরো জানান, মসজিদটির স্মৃতি রক্ষায় এর পূর্ব পাশে নতুন বড় একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে।
যেখানে এলাকাবাসীসহ দূর-দূরান্ত থেকে প্রাচীন মসজিদটি দেখতে আসা ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ আদায় করে থাকেন। তিনি নবনির্মিত মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রাচীন ইসলামিক ঐতিহ্যের এক অন্যন্য নিদর্শন প্রাচীন এ মসজদটি রক্ষায় সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন তিনি।