কুমিল্লা নগরীতে ছুরিকাঘাতে এবং কুপিয়ে মো. শাহাদাত হোসেনকে (১৫) হত্যায় জড়িতরা সবাই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগর উদ্যান পার্কের পাশের এলাকায় ওই কিশোরকে হত্যা করা হয়।
শনিবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন কুমিল্লায় কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুর রহমান। তিনি জানান, হত্যার ঘটনায় তাঁরা বেশ কয়েকজকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
শুক্রবার রাতে নগরীর মফিজাবাদ কলোনিসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়েছে। তবে ওসি মামলা হওয়ার আগে আটককৃতদের সংখ্যা জানাতে রাজি হননি।
ওসি বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটিয়েছে কিশোর গ্যাং। ’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হত্যার ঘটনায় অন্তত ১২ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যাদের মধ্যে মধ্যে কয়েকজন কিলিং মিশনে সরাসরি ছিলেন।
এদিকে শাহাদাত হোসেন হত্যাকাণ্ডের সময়কার একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, শাহাদাতকে দৌঁড়ের মধ্যেই ছুরিকাঘাত, কোপ ও মারধর করেছেন হত্যাকারীরা। মাত্র দুই মিনিট সময়ের মধ্যে কিলিং মিশন শেষ করে সবার সামনে দিয়ে পালিয়ে যায় কিশোর গ্যাংয়ের ওই সদস্যরা। ভিডিওটিতে অন্তত ২০ জনের একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপকে শাহাদাতের পেছনে ধাওয়া করতে দেখা গেছে।
নিহত শাহাদাত নগরীর পুরাতন চৌধুরীপাড়া হোমিও কলেজের ডান পাশের গাংচর এলাকার বশু মিয়ার বাড়ির গাড়ি চালক মো. শাহ আলম ভূঁইয়ার ছেলে। শাহাদাত কুমিল্লা নগর উদ্যানের (পার্ক) একটি রাইডের কর্মচারী ছিল।
ওই রাইডের মালিক তাজুল ইসলাম জনির ভাষ্যমতে, শাহাদাত প্রায় ১৫ দিন আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। শুক্রবার সে নগর উদ্যানে ঘুরতে আসে। এ সময় নগরীর মফিজাবাদ কলোনির হাসিব ও রতন নামের দুই তরুণ তাকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে পার্ক লাগোয়া স্থানটিতে তাকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত ও দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
শাহাদাত হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ১৪ মিনিটে পার্কের পূর্ব দিকের গেট থেকে অন্তত ২০ জনের একটি দল শাহাদাতকে ধাওয়া করে। হামলাকারীদের মধ্যে দুজন পেছন থেকে এসে দৌঁড়ের মধ্যেই তাকে কোপ দেয় এবং ছুরিকাঘাত করে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা সাদা পাঞ্জাবি টুপি পরা এক ব্যক্তি হামলাকারীদের বাঁধা দিয়ে শাহাদাতকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু দৌঁড়ের মধ্যে থাকা হামলাকারীরা শাহাদাতকে মারধর করতে করতে পালাতে থাকে। মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে মৃত্যু নিশ্চিত করে ৬টা ১৬ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে হামলাকারীরা। এ সময় রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শাহাদাত। পরে কিশোর বয়সের আরো কয়েকজন এসে শাহাদাতকে ফুটপাত থেকে ওঠানোর চেষ্টা করে। এ সময় তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা পাঞ্জাবি-টুপি পরা সেই ব্যাক্তি ও আরো কয়েকজন কিশোর মিলে শাহাদাতকে একটি রিকশায় তুলে হাসপাতালে পাঠায়।
শনিবার বিকেলে শাহাদাতের বাবা শাহ আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। আমি ছেলের খুনিদের ফাঁসি চাই। এ ঘটনায় আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ’
শনিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুর রহমান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। শনিবার সকালে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহতের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তবে যেহেতু মামলা হয়নি, তাই আটককৃতদের সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। শনিবার রাতের মধ্যেই মামলা করবে বলে জানিয়েছে নিহতের পরিবার। মামলার পর সব জানানো হবে। ’
হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি নিহত শাহাদাতও অপর একটি কিশোর গ্রুপের সদস্য ছিল। তারা হত্যাকারীদের একজনকে মারপিট করেছিল। সেই প্রতিশোধ নিতে এই কিশোর গ্রুপটি শাহাদাতকে হত্যা করে। তবে আমরা ঘটনার তদন্ত করছি, এখনই সবকিছু নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তদন্তেই প্রকৃত সত্য উদঘাটন হবে। তদন্ত শেষে আমরাই সব কিছু জানাব। ’