পিবিএ,কুবি: লাল মাটির ক্যাম্পাস খ্যাত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) অন্যতম ঐতিহ্য উঁচু-নিচু, ছোট-বড় পাহাড় ও টিলা হলেও দিন দিন সেই ঐতিহ্য হারাচ্ছে ক্যাম্পাসটি। নিয়মিতই পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অমান্য করেই কেটে ফেলা হচ্ছে বিশ^বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের ছোট-বড় পাহাড় ও টিলা। সম্প্রতি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাব কাম গেস্ট হাউস নামে ভবনের নির্মাণ কাজের জন্য পাহাড় কাটা শুরু করেছে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ জন্য নেওয়া হয়নি কোনো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এতে পরিবেশ বিপন্নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় হারাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এর আগেও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ব্যতীত পাহাড় কেটে তার মাটি দিয়ে সড়ক ও গাড়ি রাখার পার্কিং লট নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। কিন্তু বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের অগোচরেই এসব হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দক্ষিণ পাশে নির্মিত শিক্ষক ক্লাব কাম গেস্ট হাউসের উত্তর পাশের পাহাড়ের প্রায় অর্ধেকটাই স্কেভেটর মেশিনের সাহায্যে কেটে ফেলা হয়েছে। পাহাড় কাটা মাটিগুলো ট্রাকে করে নির্মিত ভবনের নিচু জায়গায় দেওয়া হচ্ছে। পাহাড়ের অধিকাংশ অংশ কেটে ফেলায় যেকোনোও সময় পাহাড় ধসের আশংকাও রয়েছে। লাল পাহাড়ী ক্যাম্পাস বলে শিক্ষার্থীরা গর্বের সাথে পরিচয় দিতেন সবার কাছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অপরিকল্পিত উন্নয়ণে একের পর এক পাহাড় সাবাড় হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভেতরে জন্ম নিচ্ছে তীব্র ক্ষোভ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানান,‘আমাদের পাহাড়ী ক্যাম্পাসটি প্রশাসনের বেখেয়ালি মনোভাবের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখনো প্রশাসনকে অনুরোধ করবো এই পাহাড়গুলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। একে রক্ষা করা প্রশাসনের দায়িত্ব। আর নয়তো আনন্দোলনের মাধ্যমে আমরা সে দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নেব।’
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনকে সামনে রেখে মাঠের উত্তর পাশের পাহাড় কাটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারও আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের পশ্চিম পাশের পাহাড়ের একটি অংশ মেশিনের সাহায্যে কেটে ফেলা হয়। সেই মাটি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে নির্মাণাধীন সড়কদ্বীপ ও ডরমেটরির নিচু স্থান ভরাট করেছে প্রশাসন। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইনের ২০১০-এর ৬-এর ‘খ’ ধারায় বলা হয়েছে ‘কোনো পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইবে না, তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে পাহাড় কর্তন করা যাইবে।’ আইনে পাহাড় বা টিলা কাটার জন্য ছাড়পত্রের বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের পরিদর্শক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন,‘বিষয়টি আমরা মাত্র জেনেছি। আমাদের দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্মাণাধীন ভবনের ঠিকাদার জাহাঙ্গীর বলেন,‘ভবনের মূল অংশে মাটির প্রয়োজন হওয়ায় নীচের অংশ কাটা হয়েছে।’
বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন,‘শিক্ষক ক্লাব ও গেস্ট হাউস ভবনের বেইজমেন্ট কাটতেছে। পাহাড় কাটার সংবাদ শুনে সাথে সাথে প্রকৌশলীকে পাঠিয়েছি। তারা জানিয়েছে ক্যাম্পাসের কোথাও পাহাড় কাটা হয়নি।’
পিবিএ/মোঃ জাহিদুল ইসলাম/এমএসএম