কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত

পিবিএ,কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থি অপরিবর্তীত হলেও মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুন। নেই খাদ্য। নেই বিশুদ্ধ পানি। নেই শৌচোকর্ম সারার সু-ব্যবস্থা।

এর ফলে ভোগান্তিতে পড়ে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। কারো ঘরে রান্না হলেও নেই তরকারী। ফলে শুকনো ভাত লবণ চটিয়ে খাওয়া ছাড়া কোন গতি নেই। এ দর্ভোগ জেলার প্রায় সাড়ে ৮লাখ বানভাসি মানুষের।

চিলমারী উপজেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষনার দাবি স্থানীয়দের। চিলমারী উপজেলা পরিষদের ৫বারে নির্বাচিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী বীরবিক্রম অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে বলেন, তাঁর জানামতে গত ১০০বছরে এত পানি চিলমারীর মানুষ দেখে নাই। বিরাজ করছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি।

সর্বত্র পানি আর পানি। উপজেলার ৩০হাজার ৯৩৯টি পরিবারের মধ্যে ৩০হাজারের উপর পরিবার পুরোপুরি পানি বন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গত ২৪ ঘন্টায় পানির তোড়ে অষ্টমীর চর ইউনিয়নের ৭৮টি পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। শনিবার নদী গর্ভে বিলীন হয়েগেছে খামার বাঁশপাতারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

রমনা রেলস্টেশনের উত্তরে রেললাইনের নীচ থেকে ১৫০মিটার এলাকার মাটি পানির তোড়ে সড়ে যাওয়ায় রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়েগেছে। মানুষ স্বাভাবিক প্রাকৃতিক কাজে সাড়া দিতে পারছেনা ল্যাট্রিন ডুবে যাওয়ায়। একই ভাবে সকল টিউবওয়েল এখন পানির নীচে। ফলে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট বিরাজ করছে। সবার ঘরে খাবার নেই। শুকনা খাবারের তীব্র সংকট রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় ১১০মে.টন চাল ও ২০০প্যাকেট শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

চিলমারী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আব্দুস সালাম জানান, বন্যা স্থায়ী হওয়ায় ইতিমধ্যে পানিবাহিত রোগ-ব্যাধির সংখ্যা বাড়ছে। শনিবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪শিশু ও এক বয়স্ক ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে চিলমারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় ১৩শিশু, ৭নারী ও ৭ পুরুষ রোগি। এ সংখ্যা ক্রমেই বুদ্ধি পাচ্ছে বলে তিনি জানান।

চিলমারী উপজেলা সদরের থানাহাট ইউনিয়নের খড়খড়িয়া গ্রামের আবুহার আলী (৫০) বলেন, স্ত্রী ছেলে মেয়েসহ ৬জনের পরিবার নিয়ে গত ৭দিন ধরে পানিবন্দি জীবন। আজ পর্যন্ত সরকারি কিংবা বে-সরকারি ভাবে কোন খাদ্য সহায়তা মেলেনি। ঘরে চালের যা স য় ছিল তাদিয়ে অল্প অল্প করে রান্না করলেও ছিলনা কোন তরিতরকারি। বলা চলে শুধু মাত্র লবণ চটকিয়ে কোন রকম জীবন বাঁচানো মাত্র। সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সে।

ভট্টপাড়ার জাবের হোসেন (৩৫) শ্রমজীবী মানুষ। কাজ নেই ঘরে খাবার নেই। তার উপর সাতদিন ধরে পানিবন্দি জীবন। ৪জনের সংসার নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন। অর্ধাহারে দিন কাটছে। তাঁর ভাগ্যেও ত্রাণ জোটেনি। একই অবস্থা চিলমারীর অধিকাংশ দুর্গত এলাকায়।

গণকমিটির কেন্দ্রিয় সভাপতি কলামিষ্ট নাহিদ নলেজ বন্যার ভয়াবহতা ব্যাখ্যা করে বলেন, এ অ লের মানুষদের বাঁচাতে হলে সরকারকে এখনই চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষনা করা হোক। কারণ এ তিনটি উপজেলার ৯৫ভাগ মানুষ এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে বানের পানিতে ভাসছে।

ঘরে ঘরে খাদ্যের জন্য হাহাকার বিরাজ করছে। ঘটছে মানবিক বিপর্যয়। সাধারণ মানুষের একমাত্র সম্বল গবাদিপুশুও রক্ষা করতে পারছে না। কারণ গবাদিপশু রাখার জায়গা নেই। নেই গো-খাদ্য।

জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, বন্যার ফলে ৫৭টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেছে। ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর। বন্যায় এক হাজার ২৪৫কিলোমিটার রাস্তা, ৪০ কি.মি বাঁধ ও ৪১টি ব্রীজ/কার্লভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নলকুপ ক্ষতিগস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪টি। প্রায় ২লক্ষাধিক গবাদিপশু পানিবন্দি।

শনিবার বিকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৮০সে.মি ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ১১ সে.মি কমে গিয়ে ৮৩ ৪৫সে,মি এবং ধরলা নদীল পানি ব্রীজ পয়েন্টে ৪৫ সে.মি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যা দুর্গতদের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ৫টি ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও স্যালাইন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে বলে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা:এসএম আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন।

বন্যা দুর্গতদের সহযোগিতায় প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ সামর্থ অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ করছেন। বেসরকারি এনজিওগুলো এখনো হাত গুটিয়ে বসে আছে। ডোনার সহায়তা না করায় তারা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অপরদিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকে এগিয়ে আসলেও তা একেবারেই নগন্য। ফলে বানবাসীদেরর মধ্যে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান জানান, সকল বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৮শ’ মে.টন জিআর চাল, ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৬ হাজার ৪২৮ মে.টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন...