পিবিএ, ঢাকা : প্রতিদিনের মতোই কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল সে। হয়তো বের হওয়ার সময় বলেছিল, ‘কাল ছুটি আছে। সবাই মিলে বইমেলায় যাবো।’ কিংবা অন্য কোন প্রতিশ্রতি ঝরেছিল তার মুখ থেকে। বাড়ির সবাই প্রতিবারের প্রতিশ্রতির মতোই এবারও চোখ বন্ধ করে বিশ্বসি করেছিল তার কথা। রাত বাড়তেই তার বাড়ি না ফেরায় বাড়ির সবার মাঝে অজানা আতংক জাগে। কোথায় গেল লোকটা? এরপরই হয়তো বাসার টেলিভিশনের খবরের বদৌলতে তারা জানতে পারেন তার প্রিয়জনের কর্মস্থান ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শ্মশানে পরিনত হয়েছে।
এরপরই তো বুক ফাটা আতনার্দে আকাশ কাঁপিয়ে বাতাস ভারি করার পালা। মানুষটাকে এক নজর দেখতে আহারে কি আকুতি! কেউ জড়ো হচ্ছেন লালবাগের ধ্বংসস্তুপের সামনে, কেউবা আবার ছুটছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে কেউবা আবার আশা ছেড়ে দিয়ে মর্গে। তারপর প্রিয়জনের মরদেহের খোঁজ না পেয়ে তাদের মনে এখন একটিই জিজ্ঞাসা, ‘কোথায় পাবো তারে?’
নিহতদের বেশিরভাগই সড়কে চলাচলরত অবস্থায় এবং শাটার বন্ধ করে দেওয়া দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতর আটকা পড়ে মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। আজিজুল ইসলাম নামে এক ফায়ারম্যান জানান, ‘আগুন লাগা ভবনটির নিচতলার মার্কেটের করিডরের শেষ মাথা থেকে একসঙ্গে ২৪টি লাশ উদ্ধার করি আমরা। দেখে মনে হয়েছে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তারা দৌড়ে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এছাড়া আশেপাশের দোকান ও রেস্টুরেন্ট থেকেও লাশ উদ্ধার করা হয়।’
প্রত্যক্ষদর্শী প্লাস্টিক ব্যবসায়ী পারভেজ জানান, ‘ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলায় রানা টেলিকম, বিপরীতে হাবিব টেইলার্স, হায়দার ফার্মেসিসহ আশেপাশের সব দোকান সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শাটার বন্ধ করে দেয়। সবাই ভেবেছিল শাটার বন্ধ করে দিলে আগুন থেকে বাঁচতে পারবে। কিন্ত আগুনের তীব্রতা বাড়ার কারণে সেখানেই পুড়ে মারা যায় তারা।’ নূর ইসলাম নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘রাজমহল ও উল্টোদিকের হোটেলে যারা ছিল তারাও সেখানেই মারা গেছে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, চকবাজারের চুরিহাট্টা মোড়টি একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সড়কে দুটি পিকআপ ভ্যান, একটি প্রাইভেটকার, অসংখ্য রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, মোটরবাইক, ঠেলাগাড়ি পুড়ে গেছে। এছাড়া ভেঙে পড়া কংক্রিটের দেয়াল, প্লাস্টিকের দানা, পারফিউমের ক্যান পড়ে রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার সময় চুরিহাট্টা মোড়টি যানজটে ঠাসা ছিল। একারণে রাস্তাতেই অনেকে পুড়ে মারা গেছে।
গতকাল বুধবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার থানার চুড়ি হাট্টা শাহী মসজিদের সামনে একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আশেপাশের ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট সাড়ে চার ঘণ্টার মতো কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। এই ঘটনায় দগ্ধসহ আহত কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তিকে ইতোমধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জানান, ‘এখন পর্যন্ত ৭০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ঘটনাস্থলে সার্চ অভিযান চলছে।’
পিবিএ/জিজি