ক্যাপ্টেন জহিরুল হক পাঠানকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন

মহিউদ্দিন আল আজাদ,চাঁদপুর প্রতিনিধি: মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ২নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ও পাঠান বাহিনীর প্রধান অনারারী ক্যাপ্টেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক পাঠান (৮৭) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ২৭ জানুয়ারি বিকেল ৪টা ১০ রাজধানী জুরাইনের নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন কন্যা, নাতি-নাতনিসহ বহু আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। জহিরুল হক পাঠান হাজীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের অলিপুর পাঠান বাড়ির মৃত আব্দুল গনি পাঠানের সন্তান।

মরহুমের প্রথম জানাযা জুরাইন এলাকার মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। পরে রবিবার সকালে নিজ গ্রামের বাড়ি অলিপুরে তাঁর লাশ আনা হয়। সেখানে সকাল ১০টায় মরহুমের হাতে গড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অলিপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান পরবর্তী সময়ে ২য় জানাজা শেষে অলিপুর পাঠান বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার অনারারী ক্যাপ্টেন ও পাঠান বাহিনীর প্রধান জহিরুল হক পাঠান ছিলেন পাকবাহিনীর কাছে এক আতঙ্কের নাম। যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত, সাহসী আর শক্ত মনোবলের এক যোদ্ধা। তিনি যুদ্ধকালীন চাঁদপুর মহকুমা ও সন্নিহিত বিস্তীর্ণ এলাকায় মুক্তিবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির হক পাঠানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন চাঁদপুর-৫ (হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনের ৫’বারের সংসদ সদস্য মেজর অবসরপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম।

এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন এবং মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম বলেন, জহিরুল হক পাঠান বাংলাদেশের সূর্য সন্তান। তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে চাঁদপুর অঞ্চল হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়েছে। তিনি শুধু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধায় ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ এবং একজন দার্শনিক। তার সকল কর্ম জাতির শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ রাখবে। আমি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

মরহুমের জানযার পূর্বে পৃথক পৃথকভাবে গার্ড অব. অনার প্রদান করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে ক্যাপটেন ফারহানের নেতৃত্বে কুমিল্লা সেনানিবাসের চৌকস সেনা সদস্যরা। পরে সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষে মরহুমের কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করেন। এর পর চাঁদপুর জেলা পুলিশের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এ সময় বিউগলের করুণ সুর বেজে উঠে। দাফনের পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে তাকে শেষ বিদায় সম্মাননা জানান।

জানযার নামাজের পূর্বে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক গাজী মাইনুদ্দীন, সাবেক নৌ কমান্ডো, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ আহাম্মদ মজুমদার, হাজীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আবু তাহের, সদর ইউপি চেয়ারম্যান ইউছুফ প্রধানীয়া সুমন, পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শিল্পপতি জাভেদ ইকবাল পাঠান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাজীগঞ্জ সার্কেল পঙ্কজ কুমার দে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম ফারুক মুরাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত কুমার সাহা, আবুল বাসার, হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ তদন্ত মিন্টু কুমার দত্ত মিঠু।

আরও পড়ুন...