ক্রিকেটার স্বর্ণার আইফোনসহ ডলার উদ্ধার, চোর গ্রেফতার

পিবিএ,ঢাকা: বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের বাসায় চুরির ঘটনায় জড়িত আল আমিন দেওয়ান ওরফে আযানকে দিনাজপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব; চুরি যাওয়া আইফোনসহ অন্যান্য মালামাল উদ্ধার।

গত ২৯ জানুয়ারি রাজধানীর তেজকুনীপাড়া খেলাঘর মাঠে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তার ও তার সতীর্থ খেলোয়াড়দের সাথে অনুশীলনকালে তার ব্যবহৃত দুটি আইফোন চুরি হয় এবং একইদিনে তার বাসা থেকে ৩,৫০০ মার্কিন ডলার, ব্যাংকের চেক বই ও ভিসা কার্ডসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনাও ঘটে।

উক্ত ঘটনায় ক্রিকেটার স্বর্ণা আক্তার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন; যার মামলা নং-৫১৬(৫)/২, তারিখ ৩০ জানুয়ারি ২০২৪। উক্ত চুরির ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র‌্যাব।

গত রাতে র‌্যাব-১৩ ও র‌্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল দিনাজপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চুরির ঘটনার সাথে জড়িত এবং একমাত্র আসামি মোঃ আল-আমিন দেওয়ান ওরফে আযান (২৯)-কে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ০৪টি আইফোনসহ ০৫টি মোবাইল ফোন, প্রাইম ব্যাংকের ০১টি চেক বইয়ের পাতা, প্রাইম ব্যাংকের ০১টি মাস্টার কার্ড, বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা, ০৩টি হাত ঘড়ি, ০৪টি চেইন, ০১টি নোজপিন, ০১টি ব্রেসলেট, ০২টি আংটি ও ০১টি হ্যান্ড ব্যাগ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আল-আমিন উক্ত চুরির ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আল আমিন মূলত প্রতারণার টার্গেট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি খুলে নিজেকে বড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিতো এবং সুন্দরী নারীদের আকৃষ্ট করতে নিয়মিত বিভিন্ন স্টাইলে ছবি পোস্ট করতো। এছাড়াও নিজেকে প্রদর্শনের জন্য টিকটক ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করতো। এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুন্দরী নারীদের সাথে কৌশলে সম্পর্ক গড়ে তুলতো।

পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আল আমিন ঐসকল নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের আস্থা অর্জন করে নিয়মিত তাদের সাথে দেখা করতো। অনেক ক্ষেত্রে কোন নারীকে বিয়ে করে বা বিয়ে না করে সুবিধা জনক সময়ে তাদের নগদ অর্থসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে কৌশলে আত্মগোপনের জন্য অন্য এলাকায় অবস্থান করতো এবং এসময় তাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে তার সংশ্লিষ্ট ফেসবুক আইডি ডিলেট করে দিতো। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কিছুদিন পরে পুনরায় সে কারো সাথে প্রতারণার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেকটি আইডি খুলে একই কাজ করতো বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আল আমিন নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তার পরিচয় ও বর্তমানে ছুটিতে অবস্থান করে কাপড়ের ব্যবসা করছে বলে একজন নারী ক্রিকেটার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত হয় এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে। একপর্যায়ে পরিচয়ের ১৭ দিনের মাথায় গত ১২ জানুয়ারি গ্রেফতারকৃত আল আমিন ঐ নারী ক্রিকেটারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় বলে জানায়।

জাতীয় ক্রিকেট দলের নারী অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের সাথে ঐ নারী ক্রিকেটারসহ ০৪ জন প্রায় তিন বছর ধরে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছেন। কৌশলে ঐ নারী ক্রিকেটারকে বিবাহের সূত্র ধরে গ্রেফতারকৃত আল আমিন ঐ ফ্ল্যাটে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে একটি আলাদা রুমে বসবাস করতে থাকে। এসময় প্রতারণার জন্য সে তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে এবং ব্যবসায়ীকসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কৌশলে বিভিন্ন সময় তাদের কাছ থেকে পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে প্রায় ০২ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়।

জানা যায়, গত ২৯ জানুয়ারি সকল ৯:৩০ ঘটিকায় জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণাসহ তার ০৩ জন রুমমেটসহ সতীর্থ খেলোয়াড়দের নিয়ে রাজধানীর তেজকুনীপাড়া খেলাঘর মাঠে অনুশীলনে যান। এসময় গ্রেফতারকৃত আল-আমিন বাসায় অবস্থান করছিল। পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী অলরাউন্ডার স্বর্ণার রুমের ওয়ারড্রবের ড্রয়ারের তালা ভেঙ্গে ডলার, ০১টি চেক বই, ভিসা কার্ড, তার রুমমেট অন্য নারী ক্রিকেটারের ব্যাগ থেকে ৬,৫০০/- টাকা ও তাদের ব্যবহৃত ব্যাগ করে নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে আনুমানিক ১১.০০ ঘটিকায় তেজকুনীপাড়া খেলাঘর মাঠে আসে। এসময় তাদের অনুশীলনের ভিডিও করার কথা বলে অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দুইটি ব্যাগ থেকে নিয়ে কিছুক্ষন ছবি তুলে কৌশলে মাঠ থেকে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আল আমিন স্বর্ণা আক্তারের ব্যবহৃত একটি আইফোন রাজধানীর একটি পুরাতন মালামাল বিক্রির মার্কেটে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি করে বাসযোগে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে প্রথমে রংপুর গমন করে রাতে হোটেলে অবস্থান করে। পরের দিন রংপুর থেকে দিনাজপুর গমন করে হোটেলে অবস্থান করে। অনুশীলন শেষে স্বর্ণা আক্তার গ্রেফতারকৃত আল আমিনকে দেখতে না পেয়ে অন্য নারী ক্রিকেটারের মোবাইল থেকে ব্যবহৃত মোবাইল দুইটিতে ফোন করলে ফোন দুইটি বন্ধ পায়। পরবর্তীতে তারা বাসায় ফিরে ফ্লাটের মূল দরজা লক করা অবস্থায় খেতে পায়। এসময় বাসার দারোয়ানের সহযোগিতায় তালা ভেঙ্গে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে রুমের সমস্ত জিনিসপত্র এলামেলো অবস্থায় দেখতে পায়।

গ্রেফতারকৃত আল-আমিন ২০১১ সালে রাজধানীর একটি স্কুল থেকে এসএসসি সম্পন্ন করেছে বলে জানায়। সে ইতিপূর্বে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে কাপড়েরর দোকানে চাকুরী করতো। পরবর্তীতে সে ২০১৬/২০১৭ সাল হতে নারীদের সাথে প্রতারণাসহ অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করা ও বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা করতে থাকে এবং প্রতারণার পর পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপনে চলে যেতো বলে জানায়। সে ২০২২ সালে ১ম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ইতিপূর্বে বেশ কয়েকজন নারীর সাথে তার প্রতারণা করার বিষয়ে ১ম স্ত্রী জানতে পারলে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

বর্ণিত ঘটনার পর সে এবারও পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকা থেকে রংপুর হয়ে দিনাজপুরে আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাতা ও চাঁদপুরের বিভিন্ন থানায় ০৪টির অধিক মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় সে ০৩ বার বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

আরও পড়ুন...