
ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ফ্রেডির তাণ্ডবে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক ও মালাউইতে শতাধিক নিহত, বহু আহত এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড বহু এলাকা, বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি এবং উপড়ে গেছে গাছপালা। বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফ্রেডি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকা অতিক্রম করে।
ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে প্রথমবার আঘাত করে ঘূর্ণিঝড় ফ্রেডি। গত সোমবার মোজাম্বিক ও মালাউই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করছিল বলে জানা যায়। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ গোলার্ধে রেকর্ড হওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়গুলোর মধ্যে ফ্রেডি অন্যতম এবং এটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় হতে পারে।
দ্বিতীয় দফায় গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় ফ্রেডি দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার কয়েকটি দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রবল বৃষ্টি ও মাটি ধসে এ পর্যন্ত মালউইয়ে ২০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ মোজাম্বিকেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বাণিজ্যিক কেন্দ্র ব্লানটায়ারে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ডজনখানেক শিশুও রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়া এলাকাগুলোতে কলেরার প্রাদুর্ভাব আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার দক্ষিণের ১০টি জেলায় দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির ঘোষণা দিয়েছে।
উদ্ধারকর্মীরা জীবিতদের খুঁজে বের করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ কাজের জন্য বেলচাও ব্যবহার করছেন তারা। রাস্তা ও সেতু ভেঙে পড়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে, ভারি বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসের কারণে হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা যাচ্ছে না উদ্ধার কাজের জন্য।
টানা ভারি বৃষ্টি ও প্রবল বাতাসের জেরে বেশ কিছু এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ফলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিকল হয়ে পড়েছে মালাউইয়ের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। দেশের বেশিরভাগ অংশে দীর্ঘস্থায়ী ব্ল্যাকআউট হয়েছে।
পুলিশের মুখপাত্র পিটার কালায়া জানিয়েছেন, ব্লানটায়ারের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুটি এলাকা চিলোবি ও এনডিরানডে উদ্ধারকারী দলগুলো লোকজনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। সোমবারও সেখানে বৃষ্টি হচ্ছিল এবং নগরীর বহু বাসিন্দা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ছিলেন। নিখোঁজ কিছু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে জানান কালায়া
মেডিক্যাল দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, হাসপাতালে পৌঁছানোর পর ৪০ জনেরও বেশি শিশুকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, ২০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবারের ঘূর্ণিঝড়ে। সরকার হাজার হাজার অসহায় মানুষের জন্য সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা বলছে, ফ্রেডি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া থেকে উৎপত্তি হয়। এটি রেকর্ডে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় বলে মনে করা হয়। সমগ্র দক্ষিণ ভারত মহাসাগর অতিক্রম করে এই ঝড়। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মোজাম্বিকে পৌঁছানোর আগে, ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাদাগাস্কারে তাণ্ডব চালায় এই ঝড়।
সূত্র: বিবিসি