পিবিএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যাও। শুধু গত পাঁচদিনে শনাক্ত হয়েছে ৩৭২ জন। এ অবস্থায় সীমিত আয়োজনে নগরবাসীর করোনা চিকিৎসার কী হবে সে প্রশ্ন উঠছে। তবে আশার কথা শুনিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
তারা বলছেন, ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার অনুমতি পেয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। এছাড়া চলতি সপ্তাহেই রোগী ভর্তি শুরু করবে নগরের হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, যেটিকে করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষভাবে গড়ে তোলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার অনুমতি মিলেছে আজই। শনিবার (১৬ মে) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।
তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের বৈঠক শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে এখন থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাদের সব আয়োজনই আছে। শুরু থেকেই ২০০ রোগীকে চিকিৎসা দেয়া যাবে।’
ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘চমেকের পাশাপাশি ২০ মে থেকে করোনারোগীদের জন্য ১০০ শয্যার হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালও খুলে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে রেলওয়ে হাসপাতাল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জেনারেল হাসপাতাল ও বন্দর হাসপাতাল। এসব হাসপাতালের প্রতিটিতে ১০০টি করে সিট রয়েছে। তাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যে আমরা নতুন চিকিৎসকও পেয়ে গেছি। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক থেকে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক এবং পদায়নের জন্য অপেক্ষমাণ প্রয়োজনীয়সংখ্যক নার্স নিয়োগ করলে এসব স্বাস্থ্যসেবা চালু করা যাবে। তাই সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
জানা যায়, চট্টগ্রামে বর্তমানে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউসহ ১১০ শয্যা, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিজের (বিআইটিআইডি) ৩০ শয্যা এবং বেসরকারি উদ্যোগে প্রস্তুত হওয়া চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের ৫০ শয্যাসহ মোট ২২০ শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে।
করোনা চিকিৎসায় চমেকে আলাদা ব্লক
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমরা করোনা রোগীদের চিকিৎসার অনুমতি পেয়েছি। আমরা এখন সাধারণ রোগীদের নিরাপদে রেখে করোনা রোগীদের জন্য আলাদা ব্লক তৈরি করে চিকিৎসাসেবা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছি। শুরুতে অন্তত ১০০ শয্যার পাশাপাশি কমপক্ষে ১০টি আইসিইউ শয্যা দিয়েই করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার শুরু করা যাবে। তবে প্রয়োজনে ৩০০ শয্যার ব্যবস্থা করাও কঠিন হবে না চমেকের পক্ষে।’
করোনাযুদ্ধে ৬৫ তরুণ চিকিৎসক
চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন ৬৫ তরুণ চিকিৎসক। ৩৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া মোট দুই হাজার চিকিৎসকের মধ্যে ৬৫ জনকে চট্টগ্রামে পদায়ন করা হয়েছে। এসব চিকিৎসক গত মঙ্গলবার (১২ মে) চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন দফতরে যোগ দিয়েছেন। ইতোমধ্যেই তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছেন সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য পরিচালক।
উপসর্গহীন রোগীদের চিকিৎসা হবে বাড়িতে
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা গেছে, সম্প্রতি করোনা শনাক্ত হয়েছেন এমন রোগীদের অধিকাংশই উপসর্গহীন। তাই এসব রোগীকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসাসেবা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘নতুন শনাক্ত ৬০০ রোগীর মধ্যে ৫০০ জনেরই কোনো উপসর্গ নেই। তাই আমরা তাদের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দিচ্ছি। শনাক্ত হওয়ার পরপরই তাদের ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে। আমাদের চিকিৎসকরা নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। অনেকে এভাবেই সুস্থ হচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘কোনো দেশই তাদের সব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি নিচ্ছে না। মূলত শ্বাসকষ্টসহ মেজর কোনো সমস্যা থাকলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। এছাড়াও নতুন কয়েকটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে। আসা করছি পরিস্থিতি অনুকূলেই থাকবে।’
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. জামাল মোস্তফা বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এই মুহূর্তে আর কোনো জায়গা নেই। তবে আজই অন্তত ১০ জন পুরোনো রোগীকে রিলিজ করা হবে।’
‘তবে যারা কম সংকটাপন্ন তাদের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসক-পুলিশসহ শিক্ষিত শ্রেণির অনেকেই বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হচ্ছেন। হাসপাতালের তিনজন চিকিৎসক নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। তবে সংকটটা হলো কম শিক্ষিত ও পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা নেই এমন রোগীদের নিয়ে। কারণ তারা বাড়িতে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা মানছেন কিনা আমরা বলেত পারছি না। যারা বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের বলে দেয়া আছে শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত জ্বর ও অবসাদের মতো উপসর্গ দেখা দিলে তারা যেন হাসপাতালে চলে আসেন, আমরা তাদের ভর্তি নেব।’
অবশেষে চিকিৎসায় আসছে হলি ক্রিসেন্ট
চট্টগ্রামে প্রতিদিনই করোনারোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সংকট শুরুর পর থেকে গত দুই মাসে নগরের বেসরকারি হাসপাতালের কোনোটিকেই করোনারোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজি করানো যায়নি।
বিকল্প হিসেবে পরিত্যক্ত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে সংস্কার করে দেন তারা। কিন্তু এই হাসপাতালের পরিচালনা নিয়ে আবার দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় এতদিন করোনারোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায়নি সেটিতেও।
তবে সব শঙ্কা পেছনে ফেলে সুসংবাদ দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির।
শনিবার বিকেলে তিনি জানিয়েছেন, আগামী ২০ মে থেকে করোনারোগীদের ভর্তি নেবে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল। অন্তত ১০০ রোগীকে চিকিৎসা দেয়া যাবে হাসপাতালটিতে।
পিবিএ/এমআর