চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের জেলেদের জীবন ভাল যাচ্ছেনা

মিজানুর রহমান,চাঁদপুর: চাঁদপুরের পদ্মায়-মেঘনায় জেলেরা জাল ফেলে কাংখিত ইলিশ পাচেছনা। নদীতে জাল ও নৌকা ফেলে যে পরিমান খরচ হচেছ, তাতে বরং জেলেদের লোকসান গুনতে হচেছ বলে জেলেরা জানান।

মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষার নিষেধাজ্ঞা শেষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে পদ্মা-মেঘনায় মাছ আহরণে নেমেছে জেলেরা। কিন্তু যে পরিমাণ খরচ করে নদীতে জাল ও নৌকা নিয়ে নামছেন এবং মাছ আহরণ করছেন, তাতে তাদের কোনভাবে খরচেই উঠছে না। বরং লোকসান দিতে হয়। তাই মেঘনা উপকূলীয় জেলে পাড়ার জেলেরা খুবই হতাশা গ্রস্তহয়ে পড়ছে। তারা বাধ্য হয়ে তাদের নৌকা ও জাল এখন ডাঙ্গায় উঠিয়ে রেখেছেন। তারা একপ্রকার প্রতাশ হতাশা ও আতংকে তাদের কঠিন সময় পার করতে দেখা যাচেছ।

শনিবার সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় জেলে পাড়ার জেলে ও ইলিশ আহরণকারী নৌকার মালিকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানাগেছে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, চাঁদপুর জেলায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৫২ হাজার ১৯০জন। এর মধ্যে অধিকাংশ জেলেই পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করে জীবন জীবীকা নির্বাহ করে। তারা মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় দুই বারের অভয়াশ্রমকালীন সময়ে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেও অন্য পেশার সাথে সংযুক্ত হচ্ছে না। সরকার তাদের এই সময়ে বিকল্প হিসেবে তাদেরকে খাদ্য সহায়তা ও অন্যান্য প্রনোদনা দিয়ে আসছেন। তবে এ বছর জেলেদের অভিযোগ তারা সরকারের খাদ্য সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন।

সদর উপজেলার ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের জেলে আনোয়ার দিদার জানান, অভিযান শেষ হওয়ায় ৩০ এপ্রিল দিনগত রাত ১২টা পরে ৮ জন নিয়ে মেঘনায় ইলিশ শিকারে নেমেছি। সকাল পর্যন্ত যা ইলিশ পেয়েছি, তা বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার টাকা। কিন্তু আমাদের খরচ হয়েছে আরো বেশী। যার কারণে নৌকা উপরে উঠিয়ে নোঙ্গর করে রেখেছি।

একই উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের জেলে মো. হারুনুর রশিদ ও শাহজাহান শেখ জানান, নিষেধাজ্ঞার পরে একদিন ইলিশ আহরণে নেমেছি। ইলিশ না পাওয়ায় এখন আর নামছি না। কারণ নিষেধাজ্ঞার দুই মাসে চাঁদপুরের বাহির থেকে অসাধু জেলেরা এসে জাটকাসহ সকল ধরণের মাছ আহরণ করেছে। এখন নদীতে মাছের সংখ্যা খুবই কম। মাছ না পাওয়ায় আমাদের সংসার চালাতে খুবই কষ্ট করতে হচ্ছে।

ওই ইউনিয়নের সাখুয়া গ্রামের জেলে নৌকার মালিক মামুন তপাদার ও জয়নাল বেপারী বলেন, নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি কারেন্টজাল উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। যেসব জাল দিয়ে নদীর ছোট রেনুপোনা ধ্বংস হয় সেই সব জাল নিষিদ্ধ করার জন্য সরকার আইন করতে হবে। যেমন গুল্টিজাল দিয়ে নদীর সব ধরণের ছোট বড় মাছ শিকার করা হচ্ছে। আমরা চাই সরকার পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞার সময় নিয়োজিত নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করুক এবং অসাধু জেলেদেরকে যেন জাটকা নিধনের সুযোগ না দেয়, তাহলে সরকারের নিষেধাজ্ঞা স্বার্থক হবে এবং ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদ্বীপ দে জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে অনেক জেলেই জাটকা নিধন থেকে বিরত থাকেন। নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে একটু সময় পার হলে অবশ্যই নদীতে জেলেরা ইলিশ পাবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকি জানান, নিরাপদ নদী এলাকায় ইলিশের বিচরণ থাকে। নিষেধাজ্ঞার সময় যেভাবে জেলেরা একত্রে জাল পেলে জাটকা নিধন করেছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমাদের জেলা টাস্কফোর্স করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধকালীন সময়ও জাটকা নিধন থেকে জেলেদেরকে বিরত থাকার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। জেলেরা যদি ছোট ইলিশকে বড় হওয়ার সুযোগ দেয়, তাহলে এই সুফল তারা এবং দেশবাসী পাবে।

পিবিএ/এমএসএম

আরও পড়ুন...