পিবিএ,চৌদ্দগ্রাম: করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় ধ্বস নেমেছে পোল্ট্রি শিল্পে। গত দুই মাসে শুধু চৌদ্দগ্রাম উপজেলার পোল্ট্রি মালিকদেও লোকসান হয়েছে অন্তত ২৫ কোটি টাকা। এক কথায়-লাভ ছাড়া পুঁজি উঠাতে হিমশিম খাচ্ছে মালিকরা। এজন্য তারা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। নতুবা পোল্ট্রি শিল্প বিলুপ্তির আশঙ্কা করছেন পোল্ট্রি মালিকরা।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রয়লার ও লেয়ার রেজিষ্ট্রিকৃত-রেজিষ্ট্রিবিহীন প্রায় ৫০০টি খামার রয়েছে। মানুষের আয় বৃদ্ধি ও জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আগামীতে পোল্ট্রির চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পাবে। সেই চাহিদা মেটানোর জন্য পোল্ট্রি উৎপাদনে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা দরকার।
পোল্ট্রি মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১৫-১২০ টাকা। যা দীর্ঘদিন থেকে বিক্রয় করা হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন বাজারসহ আশ-পাশের উপজেলাগুলোতে প্রতি কেজি বয়লার মুরগি ৭০-৮০ টাকাও বিক্রি করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি ডিমের উৎপাদন খরচ ৬ টাকা ৮০ পয়সা। আর বর্তমানে বিক্রয় মূল্য ৫ টাকা থেকে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। অনেক জায়গায় ৪ টাকাও বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডিম। পোল্ট্রি খাদ্যের কাঁচামাল ৮০ শতাংশ আমদানি নির্ভর হওয়ায় কাঁচামালের সংকট শুরু হয়েছে। ফলে কাঁচামালের দামও উর্ধমুখী।
সূত্রে জানা গেছে, পোল্ট্রি শিল্প বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পোল্ট্রির বিপণন, পরিবহন ও বিক্রিকে অন্যান্য কাঁচামালের সঙ্গে তুলনা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে পোলট্রি-ডিম, একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খাদ্য, দুগ্ধজাত পণ্য, অন্যান্য প্রাণী ও প্রাণিজাত পণ্য, মাছ, মাছের পোনা ও মৎস্য খাদ্য সরকার ঘোষিত ছুটিকালীন নিরবিচ্ছিন্ন উৎপাদন, পরিবহন ও বিপণন সচল রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সব জেলা প্রশাসক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে।
পোল্ট্রি মালিকরা অভিযোগ করেন, সরকার পোল্ট্রি শিল্প বাঁচাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। লোকজন দোকান খুলতে পারছে না। গাড়ি চলাচলে বিভিন্নস্থানে বাধা দিচ্ছে। পোল্ট্রি মুরগি, ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করতে পারছে না খামারিরা। ফলে খামারিরা মুরগির বাচ্চা কিনছে না। ঢাকায় মুরগীর গাড়ী পাঠাতে চাইলে গাড়ীর চালক যেতে রাজি হচ্ছে না। সড়কে চলাচলের সময় খাওয়া খেতে না পারা এবং পুলিশের নানা ধরনের হেনস্তায় চালকরা গাড়ি চালাতে চায় না। এ অবস্থায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে এ শিল্পে। এতে ধ্বসের পথে শত শত পোল্ট্রি খামার।
সূত্রে প্রকাশ, সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে বা সাড়ে ৪ ভাগ হারে যে ঋণ দেয়ার কথা বলছে তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হলে খামারীরা খুশি হবে। এ ছাড়া খামারীরা যে পণ্য উৎপাদন করছে তা ঠিকমতো বাজারজাত করতে পারলে খামারীরা লাভবান হবেন। পোল্ট্রি শিল্পকে ঘুরে দাঁড়াতে বিপিআইসিসি’র পক্ষ থেকে সরকারের কাছে যে সহায়তাগুলো চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে আছে-১. পোল্ট্রি শিল্পের প্রতিটি শাখা যেমন- নিবন্ধিত ব্রিডার ফার্ম ও হ্যাচারি, বাণিজ্যিক মুরগির খামার, ফিড মিল, ঔষধ প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারি প্রতিষ্ঠান, কাঁচামাল সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকের সুদ আগামী ৬ মাসের জন্য মওকুফ; ২. বন্দরে আটকে পড়া কাঁচামালের কারণে যে পোর্ট ডেমারেজ জমা হচ্ছে তা পুরোপুরি মওকুফ; ৩. সাধারণ মানুষের জন্য সরকার ঘোষিত খাদ্য সহায়তার অংশ হিসেবে ডিম ও মুরগির মাংস বিতরণ; ৪. পোল্ট্রি’র সবগুলো খাতের জন্য ৩০% আর্থিক প্রণোদনা প্রদান; এবং ৫. ‘কোভিড-১৯’ বিষয়ক সচেতনতার অংশ হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমে ডিম, দুধ, মাছ, মাংসের ইতিবাচক প্রচারণা চালানো।
কুমিল্লা জেলা পোল্ট্রি খামার এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান মজুমদার বলেন, পোল্ট্রি একটি শক্তিশালী অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে বেশী করে সচল রাখতে এ শিল্পের বিকল্প নেই। তবে পোল্ট্রি শিল্পের মালিক ও শ্রমিকদের উচিত হবে দক্ষতার সঙ্গে উৎপাদন পরিচালনা করা। এতে উৎপাদন খরচ কমবে, বাজার সম্প্রসারিত হবে, মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। নতুুবা দেশের গরিব ভোক্তাদের ও ছোট খামারিদের অদক্ষতার মাশুল গুনতে হবে।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মজিবুর রহমান বলেন, ‘পোল্ট্রি মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে। তাছাড়া উপজেলা পর্যায়ের পোল্ট্রি মালিকদের মনোবল ঠিক রেখে কার্যক্রম চালালে কম সময়ে সব কিছু আগের পর্যায়ে চলে আসবে’।
পিবিএ/মোঃ এমদাদ উল্যাহ/এএম