“ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারধর করতেই পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল”

বরগুনায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের উত্তেজনা সামাল দেওয়ার নামে পুলিশি পিটুনির দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

কেউ পুলিশকে বাহবা দিচ্ছেন, আবার কেউ শোকের মাসে শোকের অনুষ্ঠান ঘিরে পুলিশের এমন পিটুনি নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন। সেই সঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তও দাবি করেছেন কেউ কেউ।

এরইমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু সার্কেল পুলিশ কর্মকর্তার বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন। কারণ তার মতে পুলিশ একটি পক্ষের হয়ে ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীদের মারার উদ্দেশ্য নিয়েই অবস্থান নিয়েছিল।

জেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি রেজাউল কবির রেজা ও সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমান ইমরান এরইমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন।

যদিও জেলা ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত এক নেতা মো. রাজু আহম্মেদ রাজুর ভিডিও বক্তব্য এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

তিনি ওই ভিডিও বক্তব্যে বলেন, ১৫ আগস্টের দিনে আমরা সবাই ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন করে শিল্পকলা একাডেমিতে আসি। যেখানে মেয়র, এমপি সাহেবসহ সবাই অনুষ্ঠান করে শিল্পকলা একাডেমিতে। আমরা আসার পরে শিল্পকলা একাডেমির ওপরে যাওয়ার পর আমরা বক্তব্য শুনতেছি। এরমধ্যে দেখি কী? ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি-সম্পাদক সেখান দিয়ে মিছিল নিয়ে আসতেছে এবং নিচ থেকে তারা আমাদের দিকে পাথর খোয়া ফিইক্কা মারতাছে। আমার কাছে ভিডিও আছে। তাদের পুলিশে ধাওয়াও করছিল, পরে পুলিশ তাদের কি যেন বলছে, তারা আবার জড়ো হলো। আমরা এটুকুই দেখেছি ওপর থেকে। ভেতরে গিয়ে দেখি প্রোগ্রাম শেষ এমপি সাহেব যাচ্ছে, সে সময় জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতারাও ছিল কিন্তু তাদের পুলিশ ভেটো দেছে। মেইন গেট থেকে যেতে দিবে না, অর্থাৎ আমাদের মেইন গেট থেকে বের হতে দেবে না। এমপি সাহেবকেও ছোট একটা গেট থেকে বের করছে। বের করার পর গেট আটকে দেওয়া হয়েছে, তবে নারীদের বের করে দেওয়া হয়েছে। এরপর শুধু আমরা ছাত্রলীগের পোস্টেডসহ বড় ভাইরা সেখানে ছিল, আর এ অবস্থায় গেট আটকাইয়া ফালাইছে। এরপর অনেক পুলিশ, সিভিল পুলিশ এবং পুলিশের পোশাকধারী ছাড়া অনেকে ভেতরে ঢুকে। মানে এমন পিডান পিডাইছে কী কারণে, কোনো অবস্থায় তা জানি না। মানে এ রকম ঘটনা সারাবিশ্বে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে এ রকম অত্যাচার এরকম যে হইছে গরু আর কি পিডায়…অনেকেই দেখছে সেডা লাইভে…

এরপর তিনি তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুর পরিবারসহ নিখুঁতভাবে মারা হইছে, এই শোক দিবসে আমাদের ওপর যেভাবে আঘাত করা হয়েছে সারাবিশ্ব দেখছে এবং জানে। আমার মতো অনেক নিরপরাধ ভাইরা সেখানে ছিলেন।

আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা, যুবলীগের, আওয়ামী লীগের নেতারা ও বড় ভাইরা শতবার বলেছেন, ছাত্রলীগের ওপর হামলা না করার জন্য। যেটা হইছে সেটা আমরা দেখবো কিন্তু তাদের কথা না মাইন্যা এমন পিটুনি হইছে, তিনটা কেচিগেট, দুইটা দরজা দিয়া। কেউর হাত ভাঙছে, মাথা ফাটছে, এমনভাবে আঘাত হইছে যা বলার মতো ভাষা নেই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। প্রশাসনের হাত থেকে সাধারণ নাগরিক, মানুষ যেন বাঁচতে পারে। কসাইখানাতে কসাইরাও যে গরু জবো দেয়, তারাও গরুরে এরকম মারে না। হাত পাও বাইন্দা মারারও একটা লিমিট আছে, আমাদের এমনভাবে মারা হইছে যা বলার মতো না, এর তীব্র নিন্দা জানাই।

আহত বরগুনা সরকারি কলেজের এক ছাত্র জানান, তারা বন্ধুরা মিলে ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠান দেখতে শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়েছিলেন, যাদের সবাইকে পুলিশ পিটিয়েছে।

এদিকে ছাত্রলীগের সভাপতি পদবঞ্চিত মো. সবুজ মোল্লা বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কেউ কোনো ধরনের উসকানি দেয়নি। উসকানি দেওয়া হয়েছে রেজা ও ইমরানের নেতৃত্বে আসা মিছিল থেকে। শিল্পকলা একাডেমিতে আমাদের লোকজন এতো ইট পাবে কোথায়? ওরা ইট মারছে আমাদের দিকে আর সেই ইট গিয়ে পুলিশের গাড়ির গ্লাস ভেঙেছে। ওরা প্রস্তুতি নিয়াই ওই জায়গা দিয়া যাইতেছিল, ওগো নেতারা নদী বন্দর দিয়া মিছিল বের করছে, সেখান থিকাই দাও উদ্ধার হইছে, আর এসব ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ রয়েছে, তা দেখলেও তো পারে কিন্তু পুলিশ ওদের কিছু না বইলা হঠাৎ করেই আমাদের ওপর চড়াও হলো।

তিনি বলেন, ভেতরের দৃশ্য তো আপনারা দেখেননি, গেটের সামনের দৃশ্য যদি অতটা নির্মম হয়, তাহলে ভেতরের অবস্থা কী হইছে। পুলিশ ভেতরে গিয়া টয়লেটের দরজা ভেঙে বাহির করে গরুর মতো পিডাইছে। আর ভেতরে মাইর খাইয়া গেট দিয়া বের হওয়ার সময় মাইর খায় নায় এমন কেউ নাই। পুলিশ দুই দিকে দাঁড়াইয়া প্লাস্টিকের পাইপ, লাঠি দিয়া পিটাইছে, যা ভিডিওতে আছে। বিরোধী দলে থাকলেও এমনভাবে পেটায় না যেভাবে আমাদের পেটানো হয়েছে। আমার বাম হাত ভেঙে গেছে, এরকম এক দেড়শ পোলাপান মাইর খাইছে, আহত হইছে। স্কুলের পোলাপান যারা অনুষ্ঠান দেখতে গেছে তারাও মাইর খাইছে। আমরা এর বিচার চাই।

যদিও পুলিশের পিটুনির বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম তারেক রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তারা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছে, তারপর আমরা যখন তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করি, তারাও কিন্তু পুলিশের ওপরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করার চেষ্টা করে। আমরা শুধু তাদের শান্তভাবে বের হয়ে যাওয়ায় সহায়তা করেছি। যদি কিছু হয়ে থাকে, তাদের নিজেদের হুড়োহুড়ির কারণে হয়েছে। পুলিশ তাদের গায়ে হাত তোলেনি।

সূত্র : বাংলানিউজ

আরও পড়ুন...