রাজন্য রুহানি,জামালপুর: করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে একদিনে ২৮ ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ায় আগের রেকর্ড ভাঙল জামালপুর জেলা। রবিবার (১৭ মে) রাতে প্রাপ্ত তথ্যে জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে জমাকৃত নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে এই ২৮ ব্যক্তি। এর আগে ৮ মে একদিনে সর্বোচ্চ ২২ ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিল।
একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত ২৮ ব্যক্তির মধ্যে মেলান্দহে ২১ জন, সদরে ৩ জন, সরিষাবাড়ীতে ২ জন, দেওয়ানগঞ্জে ১ জন ও বকশীগঞ্জের ১ জন। রবিবার রাতে দু দফায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। নতুন ২৮ জন নিয়ে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৪৪ জনে দাঁড়াল।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে ৭৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই ৩ জন জামালপুর সদরের লোক। এছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে ১ম, ৩য় ও ৪র্থ ব্যাচের প্রতিবেদনে ৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মেলান্দহে ৫ জন, সরিষাবাড়ীতে ২ জন ও বকশীগঞ্জে ১ জন। ২য় প্রতিবেদনে আরও ১৭ জন শনাক্তের তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এদের মধ্যে মেলান্দহে আরও ১৬ জন ও দেওয়ানগঞ্জে ১ জন।
সর্বমোট ১৪৪ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে সরিষাবাড়ীতে ১১ জন, মেলান্দহে ৩২ জন, মাদারগঞ্জে ১৩ জন, বকশীগঞ্জে ৯ জন, দেওয়ানগঞ্জে ৯ জন, ইসলামপুরে ২৫ জন ও জামালপুর সদরে ৪৫ জন। এছাড়া সর্বমোট ৬৩ জন সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেওয়ানগঞ্জের এক ব্যক্তি মারা যান এবং ইসলামপুরে দুজন মৃতের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়।
জামালপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার ও বিকল্প তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান পিবিএ’কে জানান, জামালপুর সদরের আক্রান্ত ৩ জনের মধ্যে একজন হলেন শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের ৫২ বছর বয়সী একজন সহকারী অধ্যাপক। দ্বিতীয়জন হলেন শহরের একটি মোবাইলের দোকানের ২৯ বছর বয়সী টেকনিশিয়ান। তার বাড়ি শহরের কাচারী পাড়া ফকির পাড়ায়। তৃতীয়জন হলেন ঢাকায় কর্মরত ৪৩ বছর বয়সী একজন পুলিশ সদস্য। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের বাড়ি জামালপুরের সীমান্ত সংলগ্ন শেরপুরে বলাইয়ের চর গ্রামে। তিনি জামালপুর সদরে নমুনা জমা দিয়েছিলেন।
মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামিম আল ইয়ামিন পিবিএ’কে জানান, মেলান্দহে সংক্রমিত ২১ জনের মধ্যে ১২ জনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ও বাকিরা নানা শ্রেণি-পেশার লোক। এতদিনের মধ্যে আজই প্রথম মেলান্দহে রেকর্ড পরিমাণ করোনা শনাক্ত লোক পাওয়া গেল।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলুল হক পিবিএ’কে জানান, আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন মেলান্দহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, স্বাস্থ্য সহকারী, নার্স, ব্রাদার, ওয়ার্ডবয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, সিএইচসিপি ও তার ৭ বছর বয়সী শিশু কন্যা এবং একজন নার্সের ৮ মাস বয়সী শিশু কন্যা। এছাড়া আদিপৈত গ্রামের ৫৭ বছর বয়সী একজন পল্লী চিকিৎসক। নাগের পাড়া গ্রামে বসবাসকারী একটি ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল প্রমোশন অফিসার। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। ৩৫ বছর বয়সী একজন সিএইচসিপি নয়ানগর ইউনিয়নের দাগী কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত। মেলান্দহ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারীটির বয়স ২৮ বছর। আরেকজন নারী সিএইচসিপি বন্ধরৌহা কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত।
সরিষাবাড়ির আক্রান্ত ২ জনের একজন সরিষাবাড়ি হাসপাতাল এলাকার প্রগ্রেসিভ ডেন্টাল কেয়ারের স্বত্বাধিকারী ৫৫ বছর বয়সী ব্যক্তি। তার বাড়ি বলারদিয়ার গ্রামে। অপরজন ওই প্রতিষ্ঠানের ২৪ বছর বয়সী কর্মচারী। তার বাড়ি ধানাটা এলাকায়।
বকশীগঞ্জে সারমারা ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। দেওয়ানগঞ্জে আক্রান্ত ব্যক্তিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত।
জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস পিবিএ’কে জানান, আজ জামালপুরে রেকর্ড পরিমাণ শনাক্ত হয়েছে। একদিনে সর্বোচ্চ ২৮ জন শনাক্ত হওয়ায় আগের রেকর্ড ভেঙে গেল। মোট সংক্রমণ শনাক্ত হলো ১৪৪ জন। এর বিপরীতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২৩২৩টি। সর্বশেষ ৯৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬৩ জন।
একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ সংক্রমিত হওয়ায় উৎকন্ঠা প্রকাশ করে সবাইকে ঘরে থাকা ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস।
পিবিএ/এমএসএম