পিবিএ,জয়পুরহাট: আম্পানের প্রভাব শেষ হতে না হতেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেল কালবৈশাখী ঝড়। মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর বুধবার ভোরে তীব্র গতিতে ঝড় আঘাত হানে। ঝড়ের তাণ্ডবে জয়পুরহাটের এক পরিবারের তিনজনসহ প্রাণ গেছে চারজনের। নিহতরা হলো জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী, শিল্পী বেগম(২৮) ২ শিশু নেওয়াজ(৮) নিয়ামুল(৩) । লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জমির ফসল।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে বাতাসের চাপ বেশি থাকায় এই ঝড় হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে হঠাৎ করে শুরু হয় ঝড়। এরপর টানা প্রায় আধা ঘণ্টা তুমুল বেগে ঝড়ো বাতাস ও বজ্রসহ মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর কমে আসে ঝড়ের বেগ। একই ধরনের ঝড় হয়েছে বুধবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে। বাতাসের তোড়ে ঘুম ভাঙে অনেকের। মধ্যরাতের তুলনায় ভোরে বাতাসের গতিবেগ বেশি ছিল। ২০-২৫ মিনিট ধরে চলে তাণ্ডব। তবে ভোরে ঝড়ে তেমন বিদ্যুৎ চমকাতে দেখা যায়নি। তবে এসময় অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ রাখা হয়।
জয়পুরহাটে ঝড়ের কারণে নিহত চারজন ক্ষেতলাল ও কালাই উপজেলার। ঘুর্ণিঝড়ের প্রবল আঘাতে ক্ষেতলাল উপজেলার ২০টি গ্রামের ও সদরের ৩০ টি গ্রামের কয়েক হাজার ঘর-বাড়ি লন্ড ভন্ড হয়ে যায়। ওপড়ে পড়ে শত শত গাছ,চরম ক্ষতি হয় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ফসলের। কৃষিবিভাগ জানিয়েছে ,এতে দশ হাজার হেক্টর বোরো ধান , ৪৫ হেক্টর কলা , এবং ১৮ হেক্টর সবজির সহ প্রায় ২শত কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়।
দেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর। ঈদের দিন অর্থাৎ ২৫ মে থেকে গত তিন দিন ধরেই চার সমুদ্র বন্দরে দেখাতে বলা হচ্ছে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত। একইসঙ্গে উপকূলীয় এলাকা স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের দিকে একটি লঘুচাপ রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াৱ বয়ে যেতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার সতর্ক বার্তায় বলা হয়, বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য ও অমাবস্যার প্রভাবে রাতে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৪ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে ।
অন্যদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং বরিশাল ও খুলনা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
পিবিএ/আবুবকর সিদ্দিক/এমআর