
শান্তিতে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন তার মেয়ে মনিকা ইউনূস। সিএনএনের সাংবাদিক ক্রিস্টিন আমানপোরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে মনিকা ইউনূসকে তার পিতার বিরুদ্ধে চলমান বিচার সম্পর্কে বেশ কিছু প্রশ্ন করেন ক্রিস্টিন। উত্তরে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মনিকা। সমপ্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২৪২ বিশ্বব্যক্তিত্ব একটি খোলা চিঠি পাঠান। এতে প্রফেসর ইউনূসের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানান তারা। এ বিষয়ে মনিকা বলেন, আমার মনে হয় তার সমর্থনে চিঠি দেয়া সব নোবেলজয়ীদের আহ্বানে যোগ দিয়ে এই সময়ে আমার কথা বলা জরুরি। ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাই এর বিরুদ্ধে কথা বলাটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সাক্ষাৎকারে মনিকার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, তার পিতার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো আসলে কী? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগগুলো মূলত তার কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেটা সাধারণভাবে দেওয়ানি আদালতেই নিষ্পত্তি সম্ভব। কিন্তু এগুলোকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অর্থহীন। ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীরা শতভাগ নির্দোষ। আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞরাও বিষয়টি যাচাই করেছেন। তারাও বলেছেন, এই অভিযোগগুলো মিথ্যা।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে মনিকা কী আশা করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার প্রত্যাশা হলো ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ তুলে নেয়া হবে। এই অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন যে, আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞরা অভিযোগগুলো যাচাই করতে চাইলে তাদের স্বাগত জানানো হবে। আমি আশা করি সেটা করা হবে। আমি শতভাগ বিশ্বাসী যে, সেটা করা হলে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ থাকবে না। কারণ তিনি অপরাধী নন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মনিকা বলেন, ড. ইউনূস রাজনীতিবিদ নন। আমার মনে করি, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি একবারের জন্য এটা ভেবেছিলেন। তবে তিনি একাই একটি রাজনৈতিক দল, তার কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই।
সাক্ষাৎকারে মনিকা আশা প্রকাশ করে বলেন, কোনো এক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ড. ইউনূস একসঙ্গে কাজ করেছেন। আমি আশা করি, সেই সময়টি আবার ফিরে আসুক। শুধু গ্রামীণ কিংবা সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানগুলোর ভালোর জন্যই নয়। যদি তারা আবারো একসঙ্গে কাজ করেন, তাহলে সেটা চমৎকার হবে।
গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ে মনিকা বলেন, ড. ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পেয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক এমন বিষয়ের দিকে নজর দেয়, যেগুলোতে অন্য প্রচলিত ব্যাংক দেয় না। একটি প্রচলিত ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হলে গ্যারান্টি দিতে হয়। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক থেকে মানুষকে উপার্জনে সহায়তা করতে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হয়। দরিদ্রদের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্রদের এই ঋণ দেয়া হয়, যেখানে বিশেষ গুরুত্ব পান নারীরা। এই ব্যাংকের বেশির ভাগ গ্রাহকই নারী। গ্রামীণ ব্যাংকে নারীদের প্রাধান্য দেয়ার বিষয়ে মনিকা বলেন, শুরুতে পুরুষদের ঋণ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল তারা সেই অর্থ পরিবারের পেছনে ব্যয় করছে না। সেই কারণে নারীদের দিকে নজর দেয়া শুরু হলো। গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে এখন ঋণ পরিশোধের হার প্রায় ৯৮ শতাংশ। নারীরা ঋণ পরিশোধ করে। তাদের অনেকে বৃহৎ আকারের ঋণ নেয় এবং বড় ব্যবসা শুরু করে। এতে সার্বিকভাবে নারীদের ক্ষমতায়ন বাড়ছে।
বাংলাদেশের সর্বশেষ নির্বাচন নিয়েও মনিকার কাছে প্রশ্ন করেন ক্রিস্টিন। তিনি প্রশ্ন করেন যে, বাংলাদেশের বিরোধী দল বলছে যে, তাদের ২৫ লাখ কর্মীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কারণে অভিযোগ আনা হয়েছে। একজন মার্কিন নাগরিক হিসেবে এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? ওই প্রশ্নের জবাবে ইউনূস কন্যা বলেন, অন্য সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যদি নির্বাচনে শুধু একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে সেটা গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে কী বার্তা দিচ্ছে? আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে পারি যে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই- সেক্রেটারি বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন এবং জানিয়েছেন এটি উদ্বেগজনক।