পিবিএ,সাভার: ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের আমিনবাজার এলাকায় সালেহপুর ব্রিজে একটি যাত্রীবাহি ট্যাক্সিক্যাব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তুরাগ নদীতে তলিয়ে যাওয়ার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও হদিস মিলেনি চালক কিংবা গাড়ির। তবে উদ্ধার অভিযানের তৃতীয় দিনে যুক্ত হয়েছে ডুবুরি দলের পাশাপাশি নৌবাহিনীর সদস্যরা। তবে গাড়ি এবং চালক উদ্ধার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী । কান্নায় ও আজাহারিতে ভেঙে পড়েছে গাড়ির চালকের পরিবারের স্বজনরা ।
নিখোঁজ গাড়ির চালক জিয়াউরের ভাই জাহাঙ্গীর আলম ক্ষোভ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নিখোঁজের ৩ দিন পেরিয়ে গেল কিন্তু ডুবুরিরা চেষ্টা করেও সন্ধান দিতে পারলো না বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে । এসময় তিনি আরো বলেন , জিয়াউরের ছোট দুটি মেয়ে আছে। ঘটনা শুনার পর থেকে জিয়াউরের স্ত্রী বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছে। ‘এখন একটাই আশা অন্তত জিয়াউর রহমানের লাশটা যেন দ্রুত সময়ে ফিরে পাই’ বলে কান্নায় নিচুপ হয়ে পড়েন তিনি ।
ঘটনার পর থেকেই ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ও ৭ সদস্যের একদল ডুবুরী ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়। প্রাথমিক অবস্থায় সনাতন পদ্ধতিতে এ্যাঙ্কর ফেলে গাড়ির অবস্থান সনাক্তের চেষ্টা চালান । কিন্তু ২৪ ঘন্টা পার হলেও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল গাড়ি বা চালকের সন্ধান দিতে ব্যর্থ হয় । তবে নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে কে উদ্ধার কার্যে বাধা সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ।
এবিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সেরে উপ-সহকারী পরিচালক মোস্তফা মহাসিন পিবিএ’কে জানান, তুরাগ নদীতে পড়ে যাওয়া ট্যাক্সি ক্যাবটি উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে সম্ভাব্য জায়গা গুলোতে ডুবুরীরা সন্ধান করে যাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছি বলে জানান তিনি ।
তবে মঙ্গলবার দুপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের সাথে যুক্ত হয়েছে নৌবাহিনীর সদস্যরা । নদী গর্ভের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করে যাচ্ছে নৌবাহিনীর আধুনিক স্ক্যানার মেশিন দিয়ে ।
এবিষয়ে নৌবাহিনীর লে. সিরাজুস সালেকিন জানান, সাইট টোনার স্ক্যানার মেশিন দিয়ে নদীর প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে স্ক্যান করা হচ্ছে।যত দ্রুত সম্ভব সন্ধান পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি ।
তবে গাড়ির মালিক ও চালকের পরিচয় নিশ্চিতকারী আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট পরিচালিত ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের উপপরিচালক ফজলুল হক জানান, গাড়িটি এক্সিও ২০১২ মডেলের এবং চালকের নাম জিয়াউর রহমান । তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর বোয়ালমারী বলে তিনি নিশ্চিত করেন ।
এসময় তিনি আরো বলেন, গাড়িটি সাভার থেকে ঢাকার দিকে আসছিলেন ।গাড়িতে জিপিএস থাকার কারণে ট্যাক্সিক্যাবের সর্বশেষ অবস্থান সাভারে দেখতে পেয়েছিলেন এবং চালকের মোবাইল নাম্বার বন্ধ পেয়েছে বলে জানান ।
এসময় তিনি আরো বলেন, সাধারণত রাত ১২ টার মধ্যেই আমাদের সব গাড়ি ডিপোতে ঢুকে । তবে সেই গাড়ির হদিস না মেলায় মোটামোটি আমরা নিশ্চিত আমাদের ওই গাড়িটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে । তবে ট্যাক্সিক্যাবে কোনো আরোহী ছিলেন কি না এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করতে পারে নি ।
তবে প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন জয় জানান, রোববার রাতে আটটার দিকে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রিকশা যোগে আমিনবাজার যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখে দ্রুত গতিতে সাভার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা একটি হলুদ রঙের ট্যাক্সিক্যাব একটি বাসের ওভারটেক করছিলেন ।
এসময় ট্যাক্সিক্যাবটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তুরাগ নদীতে পড়ে যায়।এসময় দ্রুত উদ্ধারের জন্য হেল্পলাইন ৯৯৯ ফোন করে বিষয়টি জানালো প্রথমে পুলিশ সদস্যরা আসেন ।পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
লোটন আচার্য্য/ইকে