দৌলতপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারেও ভুয়া তালিকা

পিবিএ,কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত, দুস্থ, অসহায় ও কর্মহীনদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নগদ অর্থ উপহারের তালিকা নিয়ে গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। আড়াই হাজার টাকা নগদ সহায়তার এই অর্থ পাওয়ার তালিকায় স্বচ্ছল ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রবাসে বিলাসী জীবন যাপন করছেন, এমন ব্যক্তিরও নাম আছে এই তালিকায়।

উপজেলাটিতে ইউনিয়নগুলোর প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রকৃত অসহায়দের নামে এই তালিকা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। অনেক ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে চেয়ারম্যানরা ঘরে বসে পছন্দের ব্যক্তিদের এবং আত্মীয় স্বজনদের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন। একই পরিবারের পিতা-পুত্রসহ একাধিক ব্যক্তির নামও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে ১২ হাজার ৬০০ জন দরিদ্র ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের নগদ অর্থ পাওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যেই সে অনুযায়ী তালিকাও প্রস্তুত করে তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে এসব তালিকায় গরিব মানুষের বদলে স্বচ্ছল, সামর্থ্যবান ও সম্পদশালীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

দৌলতপুর সদর ইউনিয়নের পচামাদিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন প্রবাসে বিলাসী জীবন যাপন করেন। সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন, অথচ তার নাম এ তালিকায় রয়েছে। একই গ্রামের বাহারুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে রয়েছেন। তার স্ত্রী শিরিনা খাতুনের নাম এই তালিকায় রয়েছে, অথচ ওই গ্রামের অর্থ-সম্পদশালীদের মধ্যে তিনিও একজন। রিফায়েতপুর ইউনিয়নের তেলিগাংদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম আহম্মেদের পরিবারের ৬ সদস্যকে সরকারি এই অর্থ সহায়তা প্রাপ্তিতে তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের তালিকাতেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর করোনাকালে সরকারি খাদ্যসহায়তা বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতি করায় তার নামে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছেন। তারপরেও তিনি সরকারি আড়াই হাজার টাকা নগদ সহায়তার তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে জাতীয় গণমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। বালিরদিয়াড় গ্রামে নিজের শ্বশুরের অর্থ-সম্পদশালী তিন ছেলে- শাহ জামাল, রিপন ও কামালের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন চেয়ারম্যান। একইভাবে বালিরদিয়াড় গ্রামের সম্পদশালী অনেকের নাম চেয়ারম্যানের তালিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

একই অভিযোগ রয়েছে উপজেলার দুর্গম চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেও। ওই ইউনিয়নটি দৌলতপুর উপজেলা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ সরকারি খাদ্যসহায়তা বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিলেও তা দেখার কেউ ছিল না। এবার একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের আড়াই হাজার টাকা নগদ সহায়তার তালিকাতেও স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। সেখানে তালিকা তৈরিতে কোনো নিয়মই মানা হয়নি। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে তড়িঘড়ি করে ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে কেউ বাদ পড়তে পারে আবার কেউ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এখানে নয় ছয়ের কোন সুযোগ নেই।

অভিযোগ রয়েছে ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলুল হক কবিরাজের বিরুদ্ধেও। ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সাথে সমন্বয় না করে তিনি নিজ ইচ্ছামতো তালিকা প্রস্তুত করেছেন। ওই ইউনিয়নের গোলাম কিবরিয়া নামে ওয়ার্ড কমিটির এক সদস্য বলেন, আমাদের না জানিয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। এসব তালিকায় অসঙ্গতি রয়েছে। এ ছাড়া দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া, খলিসাকুণ্ডি, পিয়ারপুর, হোগলবাড়িয়া, আড়িয়া, রিফায়েতপুর, রামকৃষ্ণপুর ও প্রাগপুরসহ প্রায় সব ইউনিয়নেই এমন অসঙ্গতিপূর্ণ তালিকা করে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল হান্নান জানান, উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে ১২ হাজার ৬০০ জনের নামের তালিকা তৈরির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন সেই তালিকা আপলোডিংয়ের কাজ চলছে। তবে তালিকাভুক্তরা কবে নাগাদ নগদ অর্থ সহায়তা পাবেন তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, এসব তালিকা প্রস্তুত করেছেন ওয়ার্ড কমিটির সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে আমাদের কী ই বা করার আছে। তারপরও তালিকা তৈরিতে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

প্রসঙ্গত, এর আগে দৌলতপুর উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়নে খাদ্য সহায়তায় দুর্নীতির সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পিবিএ/শেখ সবুজ আহমেদ/এএম

আরও পড়ুন...