পিবিএ,নীলফামারী: নীলফামারীতে পরচুলা তৈরীর একটি কারখানায় গণহিস্টোরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ নারী শ্রমিক। তাদেরকে নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভর্তিকৃত হলো নিপা, সিমা, বর্ষা, দেলনা, শিরিনা, সঞ্চিতা, বুলবুলি, পলি, ববিতা, ফ্লোরা, সাহিনা, আনুফা, হিমানী, সুইটি, শেফালী, সোনালী, মিতু, আবিদা, শোভারানী, মনিষা, বিউটি রানী, কনিকা, দুলালী, আঞ্জুয়ারা, সুমনা, সুমি, জাহেদা ও হাসিনা।
শনিবার (২৯ ফেব্রয়ারী) সকাল সাড়ে ১০টায় দিকে জেলা শহরের হাড়োয়া গ্রামে অবস্থিত এভারগ্রীণ প্রোডাক্ট বিডি লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন টাইমিং মেনুফ্যাকচারিং লিমিটেডের কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কারখানার সকল শ্রমিককে তাৎক্ষনিক ছুটি দেওয়া হলে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শহরে। এমন আতঙ্কে সদর আধুনিক হাসপাতালে অন্যান্য রোগে ভর্তি হওয়া রোগিরা হাসপাতাল ছাড়তে শুরু করেন।
জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত ডা. আব্দুর রহিম জানান, হাসপাতালে আসা রোগিরা প্রত্যেকে একই রকম উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। প্রত্যেকে আতঙ্কের কারণে অসুস্থ্য হয়েছেন। তবে সকলেই শঙ্কামুক্ত আছেন। কারখানার সংশ্লিষ্ঠরা জানায়, শনিবার সকাল সাতটা থেকে শ্রমিকরা ওই কারখানায় কাজ শুরু করেন। সকাল ১০টার দিকে দুইজন শ্রমিক অসুস্থ্য বোধ করেন। দ্রুত তাদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর একের পর এক শ্রমিকরা অসুস্থ্য হতে থাকে। অসুস্থ্যদের হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। এতে শ্রমিকরা বিচলিত হলে কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি দেন সকল শ্রমিককে।
ওই কারখানার শ্রমিক নিপা রায় (১৮) বলেন, “অন্যদের অসুস্থ্য হতে দেখে ভয়ে আমিও অসুস্থ্য হয়ে পড়ি। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর এখন অনেকটা সুস্থ্য বোধ করছি”।
একই কারখানার শ্রমিক হাসিনা বেগম (২০) বলেন, “আমরা সকাল সাতটার দিকে কাজে যোগ দেই। দুইজন শ্রমিক বমি করতে করতে মাথা ঘুরে পরে যান। এ অবস্থায় একের পর এক অসুস্থ্য হতে থাকেন। আমরা ভয়ে কারখানা থেকে বেড়িয়ে আসি। পরে কারখানা ছুটি দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানার এক কর্মকর্তা বলেন,“উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রীণ প্রোডাক্ট বিডি লিমিটেডের একটি অংগ প্রতিষ্ঠান। এখানে পরচুলা তৈরীর কাজ হয়। আজ শনিবার সকালে কারখানার নিচের তলার ফ্লোরে দুইজন শ্রমিক অসুস্থ্য হয়। তাদের দেখে অন্য শ্রমিকরা অসুস্থ্য হতে থাকে। এক পর্যায়ে কারখানা ছুটি দিয়ে অসুস্থ্যদের হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়”।
তিনি জানান, ওই ফ্লোরে প্রায় ৮০০ নারী শ্রমিক কাজ করছিলেন। কারখানার তিনটি ফ্লোরে প্রায় দুই হাজার ৪০০ শ্রমিক কাজ রয়েছে। উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রীণ প্রোডাক্ট বিডি লিমিটেডের উপ-মহা ব্যবস্থাপক মো. ফেরদৌস আলম বলেন, “চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তাদের তেমন কোনো গুরুতর সমস্যা হয়নি, তারা আতঙ্কে অসুস্থ্য হয়েছেন। ঘটনার পর আমরা রোগিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি এবং কারখানা ছুটি দিয়েছি। ওই কারখানায় পরচুলার কাজ করা হয়, সেখানে কোনো ক্যামিকেলেরও ব্যবহার করা হয় না।
নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. মেজবাহুল হাসান চৌধুরী বলেন, “সকাল ১১টার দিকে একটি কারখানার কিছু নারী শ্রমিক অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে আসতে শুরু করে। তারা প্রত্যেকে একই রকম উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। মনস্তাত্বিক ভাবে সাধারণত এটা হয়। তবে এটাকে গণ হিষ্টোরিয়া বলা হয়। এদের অনেকে এখন সুস্থ্য। আশা করছি আজকের মধ্যে তারা সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন”।
অন্যান্য রোগি হাসপাতাল ছাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে সহকারী পরিচালক বলেন,“তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে। পরে আশস্ত হলে ফিরে আসে” হাসপাতালের হৃদ রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আশিকুর রহমান বলেন, “অসুস্থ্য প্রত্যেকে এখন শঙ্কামুক্ত”।
পিবিএ/জাকির হোসেন/বিএইচ