পিবিএ,নীলফামারী: টানা বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ী ঢলে বন্যার উঠানামায় গত মঙ্গলবার (৭ জুলাই)) দুপুর ১২ টায় তিস্তার পানী বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিপা) ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আবার বুধবার (১০ জুলাই) আরো ৫ সেন্টিমিটার কমে তিস্তার পানী বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পানির এই উঠানামায় বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকাল ৩টায় বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরের দিন শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৯টায় ২৪ সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যা ৬টায় তা আরো বেড়ে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বন্যার পানী প্রবাহিত হয়।
শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল ৬টায় ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ী ঢলে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানী প্রবাহ হতে থাকে। আবার সকাল ৯টায় ৬ সেন্টিমিটার কমে তিস্তার পানী বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ও বিকাল ৩টায় ৩৭ সেন্টিমিার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এদিকে, রবিবার (১৪ জুলাই) সকাল ৬টায় তিস্তার পানী বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপরদিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এর পর সকাল ৯টায় ২ সেন্টিমিটার বেড়ে ২২ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২ টায় বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে তিস্তার পানী প্রবাহিত হয়েছিল। সোমবার (১৫ জুলাই) বন্যার পানি কমে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিঃ) ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হতে থাকে।
আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল ৬টায় ১০ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২ টায় ৭ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এই সাতদিনের বন্যার পানি উঠানামার ধারাবহিকতা নিশ্চিত করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ পাঠক (পানি পরিমাপক) মো. নুরুল ইসলাম।
গত সাতদিনে নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার অন্তত ৩৫টি গ্রামের ২ লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। নিরাপদ পানী ও খাদ্য সংকটে ওইসব এলাকার মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এ ছাড়াও, কর্মজীবি মানুষ এখনও বেকার হয়ে ঘরে বসে আছে। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।
শনিবার (১৩ জুলাই) পাউবো রাত ১০টায় হলুদ সংকেত জারি করে তিস্তা অববাহিকায়। টানা বর্ষণ ও তিস্তা নদীর পানিতে জেলার জলঢাকা,ডিমলা উপজেলার লাখো পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে এবং শত শত হেক্টর রোপা আমনের বিজতলা কয়েকদিন যাবত পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের বন্যাপূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সূত্র জানায়, উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার থেকে তিস্তার পানী হুহু করে বাড়তে থাকে। শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল ৬টায় বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বন্যার পানী প্রবাহিত হয়। পানী উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের পানি পরিমাপক উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের বানভাসি আশরাফ আলী (৬৫) পিবিএ’কে বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ছোটখাতা গ্রামের সাত শতাধিক বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। পানিবন্দী এসব পরিবার চুলা জ্বালাতে না পেরে শুকনা খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। অন্যদিকে, শিশুদের খাবার সংকটে পড়েছে বানভাসী পরিবারের লোকজন।
ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান পিবিএ’কে বলেন, তিস্তাবেষ্টিত এলাকার প্রায় ৫টি সুরক্ষা বাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে গ্রামগুলোতে পানী প্রবেশ করেছে। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিতে বাদ্য হয়েছে। তাদের ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখার দাবি করেন তিনি। ত্রাণ সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, যতটুকু ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে, তা বন্যা কবলিত মানুষের পর্যপ্ত নয়।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান পিবিএ’কে বলেন, মঙ্গলবার (৭ জুলাই) ভোর রাত থেকে নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। বন্যার পানি উঠানামার ফলে ইউনিয়নের ঝাড়শিংহেশ্বর, পূর্বছাতনাই গ্রামের দুই হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আমন ধানের বীজতলার। পরপর দুবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব এলাকার মানুষের শত শত একর পুকুরের মাছ বানের জলে ভেসে গেছে। সহায় সম্বল হারিয়ে এসব মানুষ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান ।
এদিকে, জেলা ত্রাণ ও পূর্র্ণবাসন কর্মকর্তা এস এ হায়াত পিবিএ’কে বলেন, বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ডিমলা উপজেলার বানভাসীদের জন্য ১৫০ মেট্রিকটন চাল, দেড় হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, নগদ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর আগে ৫০ মেট্রিকটন চাল, ৫০ হাজার টাকা ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, এ ছাড়াও অতিরিক্ত ৫০০ মেট্রিকটন চাল, ৫ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবারের জন্য আরো চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। তা হাতে পেলে দ্রুত বন্টন করা হবে। সরকারের পক্ষে এ ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
তিনি জানান, এবারের বন্যায় নীলফামারীতে ৫ কিলোমিটার বাঁধ, কাঁচা রাস্তা ২০৬ কিলোমিটার, ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ২০০৮টি ল্যাট্রিন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পিবিএ/মো:জাকির হোসেন/এমএসএম