
ইয়াকুব নবী ইমন,নোয়াখালী: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে প্রথম বারের মতো উৎপাদিত হচ্ছে গলদা চিংড়ি পোনা। প্রচুর চাহিদা থাকায় উপজেলার মিয়ার পোলে অবস্থিত সরকারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার কর্তৃপক্ষ পোনা উৎপাদনের এই উদ্যোগ নেয়। তবে উৎপাদন খচর বহন ও টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে চাহিদা অনুযায়ী পোনা উৎপাদন করতে পারছেনা খামার কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, এলাকায় চাহিদা থাকায় চৌমুহনী মিয়ার পুলে অবস্থিত সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার কর্তৃপক্ষ বিগত ২০ বছর ধরে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। বার বার প্রচেষ্টার পর চলতি বছর প্রথম বারের মতো গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের সফল হয়। সংবেদনশীল চিংড়ি উৎপাদনের জন্য কক্সবাজারের পেকুয়া থেকে আনা হয় লবণ পানি এবং চিংড়ির মা মাছ আনা হয় পিরোজপুরের কচা নদী থেকে। মা মাছ উপযুক্ত পরিবেশে ডিম ছাড়লে সেই ডিম ট্যাঙ্কে রাখা হয়। তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে ১১টি ধাপ পেরিয়ে প্রায় ২২ থেকে ৩০ দিন পর ডিমগুলো বিক্রয় যোগ্য চিংড়ির পোনায় পরিণত হয়। এইক্ষেত্রে প্রতিটি ধাপে চিংড়ি হ্যাচারির সর্বোচ্চ বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হয়। চিংড়ির ডিম থেকে পাওয়া লার্ভিকে আর্টেমিয়া ও কাস্টার্ড খাওয়ানো হয় এবং পাশাপাশি সুস্থ-সবল পোনা প্রাপ্তিতে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলস। পোনা ভালো হওয়ায় এখান থেকে সংগ্রহ করছে চাষিরা।
সোনাপুর থেকে মাছ চাষি আবদুর রহিম জানান, আগে আমরা চিংড়ি চাষ করতে হলে উত্তর বঙ্গ থেকে রেনু সংগ্রহ করতে হতো। এখন চৌমুহনীতে সহজেই রেনু পাচ্ছি, আর রেনুগুলোও উন্নত মানের। আশা করি ভালো হবে। কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ এখানে চিংড়ির রেনু উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়ার জন্য।
একই কথা জানালেন হাজিপুর থেকে আসা আবদুল মজিদ, সোনাইমুড়ী থেকে আসা হিরণ মিয়াসহ অনেকে। বেগমগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন আজাদী ও সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার খামার ব্যবস্থাপক কে এম মাহফুজুর রহমান জানান, এ অঞ্চলে চিংড়ির প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং সমস্যা কাটিয়ে গুনগত মান ঠিক রেখে চাষিদের পোনা সরবরাহ করা গেলে গলদা চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।
বেগমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহনাজ বেগম নাজু ও ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেন মাসুদ জানান, গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের স্বার্থে যে কোন প্রয়োজনে পাশে থাকবে উপজেলা পরিষদ।
উল্লেখ্য, মাছের পোনা উৎপাদনের লক্ষে ১৯৬২ সালে সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি প্রতিষ্ঠা করে সরকার। বর্তমানে গলদা চিংড়ির পোনা ছাড়াও এখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোন উৎপাদন হচ্ছে।