পরকীয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হোক

ishs-pba

মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা: প্রতিদিন দুঃসংবাদের মধ্য দিয়ে আমাদের দিনটি শুরু হয়। বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে দুর্নীতি হচ্ছে সবচেয়ে বড় ব্যাধি। তার চেয়েও আরো ভয়াবহ একটি নীরব ব্যাধি পরকীয়া। বাংলাদেশের প্রতিটি শ্রেণির মানুষ এই ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং এর প্রতিফলনও ঘটছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। বাংলাদেশের আইন-আদালতের বারান্দায় প্রতিদিন নানা শ্রেণির মানুষ তাদের প্রিয়জনকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ‘ডিভোর্স’ দিয়ে দিচ্ছে। সংসারে কারো কারো ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে। তারপরেও ডিভোর্স একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পত্রিকার পাতা খুললেই নানা সংবাদ আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটে। যখন দেখি পরকীয়ার কারণে নির্মমভাবে মাকে হত্যা করা হয়েছে, কোথাও দেখি শিশুকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, কোথাও দেখি স্বামীকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। আবার কোথাও দেখি প্রবাসী দেশে ফিরেই স্ত্রীকে খাদ্যের সাথে বিষক্রিয়া দিয়ে নীরবভাবে হত্যা করেছে। চিকিৎসক চিরকুট লিখে নিজের আত্মহত্যার দায় স্ত্রীর উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তখন মনে হয় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখন সবচেয়ে বড় ব্যাধি পরকীয়া।

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্কুলের অভিভাবকরাও এখন এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন চাইনীজ রেস্তোরায় দেখা যায় প্রতিদিনই একজনের স্ত্রী অন্যজনের স্বামী একান্তে সময় কাটাচ্ছে। আমাদের চারদিকে পরকীয়ার কারণে নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও বিদেশী কিছু চ্যানেলের অপসংস্কৃতি আমাদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। যার দরুন আমাদের এই অবক্ষয়। সমাজে কেউ এখন আর নিরাপদ নয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বসের দৃষ্টি থাকে তার প্রতিষ্ঠানের সুন্দরীর দিকে। তেমনি সরকারি চাকুরীজীবীরাও আজকাল এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।

সাংস্কৃতিক অঙ্গণেও নীরবভাবে ঢুকে পড়েছে এই মরণব্যাধি। কবিতাঙ্গণ, নৃত্যাঙ্গণ, সঙ্গীতাঙ্গণ এমন কোন অঙ্গণ নেই যেখানে এই ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েনি। এভাবে চলতে থাকলে একদিন ঘুম থেকে উঠে যদি দেখি আমার সামনেই আমার স্ত্রীকে আরেকজন নিয়ে যাচ্ছে তখন অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আমরা দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে থাকি।মাদকমুক্ত হওয়ার জন্য সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করে থাকি। অথচ পরকীয়ার বৈধতার জন্য কেউ কেউ আদালতে রীট করেছেন। আমাদের সমাজকে তারা কোথায় নিয়ে যেতে চায় ?

পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হয়ে তারা নিজেদের সংস্কৃতিকে আজ ভুলতে বসেছে। তাদের মনে নেই আমাদের দেশ হাছন রাজার দেশ, আব্বাস উদ্দিনের দেশ, কবি জসীম উদ্দিনের দেশ। আমরা ভুলে যাচ্ছি আমাদের মাটিতে শুয়ে আছেন খাজা খানজাহান আলী, হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরান (রহ.), হযরত শাহ মখদুম (রহ.) এর মতো পীর-দরবেশ-আওলিয়াগণ। আমরা ভুলে গেছি ফজরের আজান শুনে ঘুম থেকে উঠে মসজিদে যাওয়ার কথা। আমরা কোরআনের পবিত্র আয়াতের কথাও ভুলে গেছি। আমাদের হৃদয়ে মায়ের প্রতি আগের মত কোন শ্রদ্ধা নেই। সেই জন্যই তো বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে বৃদ্ধাশ্রম। সেখানে আমাদের মা-বাবারা অপেক্ষা করেন একটিবার প্রিয় সন্তান ও নাতি-নাতনীদের দেখার জন্য। তারপরেও আমরা তাদের সেই অপেক্ষাটুকুও পূরণ করতে পারছি না।

এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ধ্বংস হতে আর সময় লাগবে না। জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে আখলাক বা চরিত্র। আর সেই চরিত্রের অবক্ষয়ের কারণেই সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে পরকীয়ার মত একটি মরণব্যাধী। যে ব্যাধিতে আক্রান্ত একটি পরিবার, একটি সমাজ সর্বশেষ একটি দেশ ধ্বংসের দ্বারপান্তে উপনীত হবে। আসুন এখনই সময় রুখে দাঁড়াই এই সামাজিক ব্যাধি পরকীয়ার বিরুদ্ধে। সুস্থ্য ধারার জীবন গঠনের জন্য আমরা শপথ নেই। আপনাকে যদি কেউ অনাকাঙ্খিত পরকীয়া ব্যাধিতে আক্রান্ত করতে চাই, সাহস করে তার মুখোশ খুলে দিন। সে যেই স্তরের মানুষই হোক না কেন। হোক না বড় রাজনীতিবিদ বা কোটিপতি। কিংবা বড় ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ডাক্তার। কাউকেই ছাড় নেই। সমাজের তৃণমুল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত যারাই এই ফাঁদে আপনাকে ফেলতে চায়। তার বিরুদ্ধে আপনার যুদ্ধ হোক শুরু। এই ব্যাধি মুক্ত করার জন্য “সময়ের আয়নায়” প্রতিদিন মুখোমুখি হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে। আপনিও চলে আসতে পারেন এবং নির্ভয়ে নিজের কথা বলতে পারেন।

লেখক: মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার সমিতি ।

পিবিএ/হক

আরও পড়ুন...