
তার পড়া বা মন্ত্রপূত পানি করোনা সারাতে পারে— এমন দাবি তোলা এক ওঝা নিজেই মারা গেছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। বুধবার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় ঘটেছে এই ঘটনা।
মৃত ওই ওঝার নাম এলিয়ান্থা হোয়াইট (৪৮)। শ্রীলঙ্কার ক্রীড়াঙ্গন, বিনোদন ক্ষেত্রের তারকাদের পাশাপাশি দেশটির শীর্ষ রাজনীতিকদেরও ‘চিকিৎসাসেবা’ দিতেন তিনি। এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেও রয়েছেন এলিয়ান্থার রোগীর তালিকায়।
গত নভেম্বরে এলিয়ান্থা হোয়াইট ঘোষণা দিয়েছিলেন, মন্ত্রপূত বা পড়া পানির সাহায্যে তিনি শ্রীলঙ্কা থেকে করোনা মহামারি দূর করবেন।
তার এই পানিপড়া চিকিৎসায় সায় দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী পবিত্র ওয়ান্নাইয়ারাচ্চি; কিন্তু অনুমোদন দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হন তিনিও। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে শেষ পর্যন্ত তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি হতে হয়। এই ঘটনার জেরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব হারান তিনি। বর্তমানে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় আছেন পবিত্র।
এলিয়ান্থা হোয়াইট প্রথম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মনোযোগ আকৃষ্ট করেন ২০১০ সালে। ওই বছর ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার প্রকাশ্যে তাকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, তার হাঁটুতে ইনজুরি ছিল এবং এলিয়ান্থার চিকিৎসায় সেই ইনজুরি দূর হয়েছে।
এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে তিনি আরও বলেন, হাঁটুর ইনজুরির কারণে দলের সঙ্গে তার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর অনিশ্চিত ছিল। এলিয়ান্থা হোয়াইটের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার পর সেই ইনজুরি তো কেটেছেই, উপরন্তু সেই সফরে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলেন তিনি।
শচীনের এই ঘোষণার পর ২০১০ সালে বার্তাসংস্থা এএফপিকে সাক্ষাৎকার দেন এলিয়ান্থা। সেখানে তিনি দাবি করেন, ১২ বছর বয়স থেকেই নিজের ভেতরে ‘বিশেষ শক্তি’ অনুভব করছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শচীন ছাড়াও ভারতীয় ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর ও আশীস নেহরার চিকিৎসা করেছেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাকে করোনা টিকা নেওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যরা অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু তা অগ্রাহ্য করেছিলেন এলিয়ান্থা।
বৃহস্পতিবার করোনা বিধি যথাযথভাবে মেনে কলম্বোর মূল শ্মশানে তার মরদেহ সৎকার করা হয়।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে এলিয়ান্থার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। এক টুইটবার্তায় রাজাপাকসে বলেন, ‘এলিয়ান্থা হোয়াইটের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তার পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। যেসব রোগী তার সংস্পর্শে সুস্থ হয়েছেন, তাদের মাধ্যমেই বেঁচে থাকবেন তিনি।’
তবে শ্রীলঙ্কার মূলধারার ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা বলেছেন, এলিয়ান্থা ছিলেন একজন প্রতারক এবং রোগ সারানোর যে দাবি তিনি করতেন— তার কোনও ভিত্তি নেই।
২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখেরও বেশি।
সূত্র : এএফপি।