আগামী নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলীয় নেতাকর্মীদের পাল্টা আঘাতের পরামর্শ দিয়েছেন।
ভোলায় পুলিশের গুলিতে নিহত এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহতের ঘটনায় সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল এ সভার আয়োজন করে।
গয়েশ্বর বলেন, আমরা পুলিশকে নিয়ে এমনভাবে কথা বলি যেন মনে হয়, ওরা আমাদের দুলাভাই। প্রজাতন্ত্রে সকল কর্মচারি আমাদের ট্যাক্সের টাকায় চলে। কিন্তু তাদের টাকায় জনগণ চলে না। তারা যদি আমাদের সাথে বে-আইনি করে তাহলে আমরা তাদের সাথে সেরকম করতে পারব।
তিনি বলেন, দেশটার মালিক পুলিশ কিংবা সরকার নয়। এই দেশের মালিক আব্দুর রহিমের মতো জনগণ। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। টাকার হিসাব চাইলে গুলি করে মানুষ মারবেন? আমরা পুলিশকে দোষারোপ করি গুলি করছে বলে। পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে কে? তাকে আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।
‘এসপিকে বলতে চাই, আপনি পৈতৃক সূত্রে ভোলার মালিক হন নাই। চাকরি করতে গেছেন। সভা শেষে তারা মিছিল করতে চেয়েছে। মিছিল করা কোনো অন্যায় নয়। এটা নাগরিক অধিকার। আপনি বাধা দেয়ার কে? আর বাধা দিতে গিয়ে আপনি গুলি করার কে? প্রতিটি গুলির হিসাব আপনাদেরকে দিতে হবে।’
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, ঈশ্বর! যে সকল পুলিশ এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের দীর্ঘায়ু করো যেন আমরা নিজের হাতে তাদের বিচার করা না পর্যন্ত ওরা জীবিত থাকে। সরকারের নির্দেশ যদি না থাকতো তাহলে ভোলার এসপি ইতোমধ্যে সাসপেন্ড হতো। যারা গুলি করেছে তারা বিভাগে ক্লোজড হতো।
ভোলায় গতকালের ঘটনায় যারা গুলিবিদ্ধ এবং গুরুতর আহত তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, ভোলায় কর্মীদের সমাবেশ ও মিছিলের মধ্যে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে হারিয়ে গেল আমাদের এক সহযোদ্ধা আব্দুর রহিম। ঢাকার দুটি মেডিক্যালে এখন যারা চিকিৎসাধীন আছেন তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মোবাইলে ছবি তোলা, ভিডিও করা আর শেয়ার দেয়ার মধ্যেই নেতা-কর্মীরা তাদের দায়িত্ব সারছেন। রহিমের মৃত্যুতে কেন তাৎক্ষণিক নেতা-কর্মীরা সারাদেশে আগুন জ্বালিয়ে না দিয়ে নির্দেশের অপেক্ষায় থাকে এসব নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের সিনিয়র এই নেতা।
গয়েশ্বর বলেন, আজকে সকালে গায়েবী জানাজায় ছিলাম এবং দেখলাম। একটি জানাজার অনুষ্ঠানে চারিদিকে শুধু ক্যামেরা। মানে ছবি তোলাটাই মূল কাজ। তার জন্য দোয়া করাটা মূল কাজ না। হাতে হাতে পকেটে পকেটে ক্যামেরা। ছবি তোলা, আর নেতাদের কাছে পাঠানো আর ফেসবুকে দেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতেছি। এটিই প্রমাণ করে আমাদের দায়িত্ববোধ। আমরা প্রতিদিন আসি, প্রতিদিন প্রতিশ্রুতি দেই, প্রতিদিন অঙ্গীকার করি, কিন্তু কাজটা করি না।
তিনি আরো বলেন, আজকে আমার দলের কর্মী মারা গেছে সে ছাত্রদল, যুবদল, সেচ্ছাসেবক দল কিনা জানি না। সে জিয়ার অনুসারী, সে খালেদা জিয়ার অনুসারী, সে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে কর্মসূচি পালনে মারা গেছে। আজকে এখানে কেন বেছে বেছে স্বেচ্ছাসেবক দলের লোকেদের আসতে হবে? কে ঢাকা শহরের অন্যান্য নেতা-কর্মীরা আসতে পারবে না। কেন ঢাকার একটি নির্ধারিত জায়গায় মিছিল হবে? কেন সারা ঢাকা, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে না। এটা আমার মাথায় ধরে না। ‘সিদ্ধান্ত দেন, নির্দেশ দেন, আমরা অনেক কিছু করবো।’ এটা রাজনীতির ভাষা না। যখন ঘটনা ঘটে তাৎক্ষণাত জানিয়ে দিতে হবে সারা দেশে। এই কাজ করার জন্য উপরের দিকে সিদ্ধান্তের জন্য তাকিয়ে না থেকে সাথে সাথেই মাঠের কর্মসূচিতে যাওয়া দরকার। যা হবে নগদ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, কারো নির্দেশের অপেক্ষায় বসে না থেকে যার যার জায়গা থেকে প্রতিবাদ, প্রতিহত করার ইঙ্গিত দিয়ে গয়েশ্বর বলেন, আব্দুর রহিমের মতো মানুষ মারা যাবে, আর আমরা বক্তৃতা দেব, বসে বসে চিনাবাদাম খাবো। এটা হয় না। আন্দোলন করতে গিয়ে কেউ একা নয়। সকল সংগঠনকে মাঠে নামতে হবে। তাদেরকে জবাব দিতে হবে। এরা রক্তপিপাসু, এদের সাথে সুন্দর সুন্দর কথা সুন্দর বাক্য-বিনিময়ের দরকার নাই। যেখানে হাতছাড়া কথাই চলে না সেখানে হাতই ব্যবহার করতে হয়। আপনারা সব বোঝেন তাই যখন যেখানে ঘটনা ঘটবে সারা দেশে যে যেখানে আছেন মুহূর্তের মধ্য বেরিয়ে পড়বেন। আজকে আমাদের না পেয়ে ঘরের মানুষদেরকে ধরে নিয়ে যায়। সুতরাং এরা যদি নিয়মের বাইরে আইনের বাইরে কাজ করতে পারে, এদের সাথে আমার আইনের ভাষায় কথা বলার প্রয়োজনটা কি? আগামী নির্বাচনের আগে এই সরকারের নির্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। এদের পতন নিশ্চিত করতে হবে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, নুরুজ্জামান সর্দার, নাজমুল হাসান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।