‘ফণি’ আতংকে খুলনার তিন উপজেলার ১০ লাখ মানুষ

পিবিএ,খুলনা: একদিকে দূর্বল বেড়িবাঁধ, অন্যদিকে অনিরাপদ বাসস্থান। এমন অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় ফণি ভাবিয়ে তুলেছে খুলনার উপকূলীয় তিনটি উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষকে। যদিও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। তবুও অজানা শঙ্কায় আগে ভাগেই এলাকা ছাড়ছেন অনেকেই।

স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯ সালে প্রলয়ংকারি দুর্যোগ ‘আইলায়’ জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছিল এলাকায়। ওই সময় মাটির ঘর ভেঙে ও জলোচ্ছ্বাসের কবলে এ তিন উপজেলায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও ঘুর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকতে আতঙ্কিত করে তুলেছে স্থানীয় মানুষকে।

ফণি’
‘ফণি’ আতংকে খুলনার তিন উপজেলার ১০ লাখ মানুষ

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এ তিন উপজেলা বিভিন্ন গ্রাম থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে মানুষ ঘর ছাড়তে শুরু করেছে। অনেকেই মালামাল নিয়ে শহরমুখি হয়েছেন। আবার অনেকেই এলাকার পাকা ঘর আছে এমন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয়ের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছেন। এছাড়া এলাকার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দিরে বাড়ির মালামাল সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।

দেখা গেছে, এ তিন উপজেলার ৮০ শতাংশ মানুষ মাটি ও কাঠের তৈরী ঘরে বসবাস করেন। এসব ঘর ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সহনসীল নয়। আইলার পর এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি সহযোগীতায় ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সহনসীল গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যাক্তিরাও পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। কিন্তু জনসংখ্যার তুলনায় খুব বেশি নয়। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাঁধ গুলো দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে দূর্বল হয়ে পড়ায় সেটিও আতঙ্কের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে।

সূত্র অনুযায়ি, এ মুহুর্তে কয়রা উপজেলায় প্রায় ২৫ কিলোমিটার, দাকোপে ২১ কিলোমিটার ও পাইকগাছা উপজেলায় ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। নদীতে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৫ ফুট পানি বৃদ্ধি হলেই এসব দূর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস,এম শফিকুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। প্রতি নিয়ত ছোট-খাটো প্রাকৃতিক মোকাবেলা করেই এখানকার মানুষ টিকে আছে। তবে বড় কোন দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা এখনও গড়ে ওঠেনি। এখানে সরকারিভাবে ১১৬টি ঘূর্ণি ঝড় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যে কারনে বড় যে কোন দুর্যোগের আগে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনার উপকূলীয় তিনটি উপজেলার প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের জন্য ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে ২৪২টি। খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল হোসেন জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি এবং নয়টি উপজেলায় নয়টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক করতে উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে মাইকিং করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১১৪ টি মেডিকেল টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি আপদকালিন সময়ে লোকজনকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন।

পিবিএ/এইচআর/আরআই

আরও পড়ুন...