পিবিএ,ফরিদপুর: দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে বিপাকে পড়েছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আশপাশের এলাকার পাটচাষিরা। নদ-নদী, খাল-বিল, ডোবা-নালায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় চাষিরা তাদের উৎপাদিত পাট জাগ (পচন) দিতে পারছেন না। ফলে পাট নিয়ে এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক চরম ভোগান্তি ও অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।
উপজেলার বিল দাদুড়িয়া, বাইখির, তেলজুড়ি, ময়েনদিয়াসহ ময়না, সাতৈর, দাদপুর, গুনবহা , ঘোষপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা পাট কেটে জমিতে ফেলে রেখেছেন। কোন কোন কৃষক তার ক্ষেতের উৎপাদিত পাট নসিমন, ভ্যান বা মাথায় করে প্রায় দুই, তিন কিলোমিটার দূরে নিয়ে রাস্তার পাশের খাল বা ডোবায় পাট জাগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে খরচ বৃদ্ধি ও পাটের রং লাবণ্যে উজ্জ্বলতা হারানোর সম্ভাবনা থাকায় অনেক চাষি পাট কাটতে সাহস পাচ্ছে না। আবার যারা কাটছেন তাদের বেশির ভাগ চাষিই উৎকন্ঠায় রয়েছেন উৎপাদন খরচ নিয়ে।
একাধিক কৃষক জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বিল দাদুড়িয়া, বিল গজাড়িয়া, হরিহরনগর বাওর, পুটিমারির বিল সহ আশপাশের মাঠঘাট বর্ষার পানিতে থৈথৈ করে । নদী থেকে উপচে পড়ে পানি। কিন্তু এবছর আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণের মাঝামাঝি সময় এলেও এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীতে পানি নেই বললেই চলে। এছাড়া খাল ও বিলে পানি আসার স্লুইস গেটগুলোও বন্ধ রয়েছে। যে কারণে সোনালী আঁশ-গলায় ফাঁস হতে বসেছে এ এলাকার চাষিদের।
বোয়ালমারী পৌরসভার কলারণ গ্রামের পাট চাষি আব্দুল কুদ্দুস মোল্লা বলেন, ‘এ বছর এখন পর্যন্তু খালে-বিলে যেমন পানি আসেনি, এ মৌসুমে তেমন বৃষ্টিও হয়নি। তাই, পানির অভাবে পাট জাগ দিতে কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিনা। পাটের ভালো দাম পেতে হলে- পাটের রং ভালো হতে হবে, আর রং ভালো পেতে হলে পর্যাপ্ত পানি চাই, ভাসা পানি না হলে মানসম্মত পাট উৎপাদন সম্ভব না। দিন দশেকের মধ্যে পানি না এলে নিশ্চিত পাট নিয়ে এবার পথে বসবো। একই কথা জানান ছোলনার পাটচাষি ওসমান শেখ। তিনি বলেন, এবছর পাট আবাদে আমাদের খরচখরচা বেশি হয়েছে। পরিশ্রমও বেশি, তারপরেও যদি ভালো দাম না পাই তাহলে আর পাটচাষ করবো না।
বোয়ালমারী কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় বলেন, ‘এ বছর বোয়ালমারী উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাট চাষ হয়েছে। ফলনও আশাতিরিক্ত । জুন মাসের শেষ দিকে বিছাপোকার আক্রমণ হলেও সহজে তা নাশকরা সম্ভব হয়েছে। এ বছর ১৪,৫১০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে । পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে ঠিকই, এতে বিচলিত হবার কিছু নেই, অচিরেই ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সারাদেশে বন্যা হলেও এই অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত পদ্মার তিনটি শাখা নদী মধুমতী, চন্দনা-বারাশিয়া ও কুমার নদীর মোহনা স্থলে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চর পড়ায় নদী গুলোর প্রবাহ কমে গেছে। যে কারণে খাল বিলে পানি নেই ।
বিল বা বাওরে পানি না আসার কারণ হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বোয়ালমারী উপবিভাগীয় কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী শশাঙ্ক কুমার বিশ্বাস বলেন, মূলত মধুমতি, বারাশিয়া ও কুমার নদীর মোহানায় চর পড়ায় পানি প্রবাহ নেই।তাছাড়া দাক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানি সম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (ফেজ)কে স্লুইস গেটের তদারকির দায়িত্ব বুঝে দেওয়ায় গেটগুলো কেন বন্ধ রয়েছে এ ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারবো না।
পিবিএ/সুমন খান/বিএইচ