বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানিয়েছে সরকার: ফখরুল

বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রে’ পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে গড়ে ওঠেনি। ভালো স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে আমাদের বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এর পেছনে বড় অবদান আওয়ামী লীগের। স্বাধীনতার পর তারাই ক্ষমতায় এসেছিলো। কিন্তু সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছিলো। মানুষের বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় আজও আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করার চেষ্টা করছে।

রোববার (৭ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শনকে ধারণ করে ড্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যারা দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছে, মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের নানা প্রান্তে ছুটে যাচ্ছে। বিশেষত করোনাকালীন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

ড্যাবকে আরও বেশি সুসংগঠিত হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পেশাজীবীরা রাজনীতি সচেতন হবেন, কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে তাদের মিশে যাওয়াটা উচিত নয়। দেশ আজ সম্পূর্ণ ভয়াবহ সংকটে। অবৈধ সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় চেপে বসেছে। গোটা বিশ্বকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতা দখল করে আছে তারা।

ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০০৮ সালে কারচুপির নির্বাচন করেছে। ২০১৪ সালে ভুয়া নির্বাচন করেছে। ২০১৮ সালে কী হয়েছে তা সবার জানা। সংসদ হলো রাবার স্ট্যাম্প। একজন কথা বলেন আর বাকিরা বলেন ‘বেশ বেশ’। জনগণকে নির্বাচনবিমুখ করেছে সরকার।

তিনি বলেন, আজকে অবিশ্বাস্য হারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। মানুষ এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে। এমনই এক সংকটকালে জ্বালানির দাম বাড়ানো চরম অমানবিক কাজ। এ সরকার ভয়াবহ।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তারা দেশকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করছে। বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা। খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা। এসবের অবসান হতে হবে। সরকার জেনেশুনে দেশকে ধ্বংস করছে।

তিনি বলেন, বিএনপির শাসনামলে দেশে ইউরিয়া সার ৩০০ টাকায় (৫০ কেজির বস্তা) মিলতো। এখন একই বস্তার দাম ১৩০০ টাকারও বেশি। তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ সবকিছুর দাম বাড়ায় মানুষ ফসল উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। কৃষকেরা পেশা পরিবর্তন করছে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে এমন এক সময় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে। সরকার জ্বালানির দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটছে। মানুষের পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকেছে। জ্বালানির দাম বাড়ায় সবকিছুর ব্যয় বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের যে আন্দোলন তা শুধু বিএনপির নয়। এ আন্দোলনে সবাইকে সম্পৃক্ত হতে হবে। দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে সব পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মেহেদী হাসান ও ডা. মো. আবুল কালামের যৌথ পরিচালনায় আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এগ্রিকালচারিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গণি চৌধুরী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার ও দেশবাসীর জন্য সুস্থতা কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

আরও পড়ুন...