
বিএনপির কালো পতাকা মিছিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতর্কিত হামলা চালিয়ে সারাদেশে দলের ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ৫০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ বিএনপির। এছাড়া পুলিশি হামলায় প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলেও অভিযোগ দলটির।
ডামি নির্বাচন করে সরকার আরও বেশি ভয়ের মধ্যে আছে জানিয়ে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, আতঙ্কের একটা প্রতিযোগিতা দেখছি সরকারের মধ্যে। কালো পতাকা মিছিলেই সরকারের এতো ভয়। ভয়ের কারণ একটাই ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই ডামি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি মাইক্রোস্কোপ দিয়েও দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
পুলিশের আচরণের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, তাদের কারণেই ভালো মানুষগুলো জেলে, কারাগারে। আর কুখ্যাত খুনি, সন্ত্রাসীরা বাইরে। পুলিশই আবার এমপিদের নির্বাচিত করে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজ বিএনপির পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা মিছিলে হামলা ও নিপীড়ননির্যাতন চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবৈধ সরকার বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছে। কোনো উসকানি ছাড়াই বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ড. আব্দুল মঈন খানের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে। ধাক্কা দিয়ে জিপে উঠিয়ে নিয়ে যায়। ড. মঈন খান পুলিশের উদ্দেশ্যে বারবার বলছিলেন তার অপরাধ কী। কিন্তু পুলিশ সে কথায় কর্ণপাত করেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপককে ধাক্কা দিয়ে জিপে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং নাজেহাল করে। পরে তাকে ছেড়ে দিলেও তার সঙ্গে আটক হওয়া অন্য নেতাকর্মীদের এখনও ছেড়ে দেয়নি পুলিশ।
রিজভী আরও বলেন, বিএনপির কালো পতাকা মিছিল থেকে বিনা কারণে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক ও সদ্য কারামুক্ত নেতা কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমকে বাগেরহাটের রামপাল থেকে এবং জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ মহিলা দলের ৪ জন নেত্রীকে রাজধানীর উত্তরা থেকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। সুলতানা আহমেদসহ মহিলা দলের নেত্রীদেরকে এখনও পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে তাদের পরিবার-পরিজন গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছেন। কিছুদিন আগে সুলতানা আহমেদের হার্টে রিং বসানো হয়েছে, তিনি গুরুতর অসুস্থ। অথচ তাকে এখনও ছেড়ে না দেওয়া চরম অমানবিক। আমি অবিলম্বে কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম এবং সুলতানা আহমেদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহবান জানাচ্ছি।
‘মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ একজন হার্টের রোগী জানিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, তাকে টেনে হেঁচড়ে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। এ দেশে কি নারীরাও নিরাপদ নয়? কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম একদিন আগে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তি পেয়ে তিনি পরিবারের কাছে দেখা করতে গেলে আজ সরকারের আজ্ঞাবহ বাহিনীকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এটা অমানবিক ও বর্বর।’
‘বিএনপির পুরো কেন্দ্রীয় কার্যালয় কালো পতাকা দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত’- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, অহংকার করেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুলিশ দিয়ে আছেন। এরও কিন্তু শেষ আছে। আপনার সরকারের পতন হলে শোকের কালো পতাকা মিছিল করতে হবে সেই দিনের অপেক্ষা করুন। কারণ আপনার সরকারের পতন অত্যাসন্ন।
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, জোর করে বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার-নির্যাতন করে বন্দুকের নলে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের মাধ্যমে তিনি এখন আরও বেসামাল কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন। নিজ দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যেই দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে ওবায়দুল কাদের সাহেবদের মিথ্যাচার উন্মোচিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের জনগণ তাদেরকে শুধু প্রত্যাখ্যানই করেনি, লালকার্ড দেখিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ এখনও ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী কারান্তরীণ রয়েছেন। এখনও দেশজুড়ে বেপরোয়া গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে।
কালো পতাকা মিছিলকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আটক হয়েছে বলে জানান বিএনপির এই মুখপাত্র।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা রফিকুল ইসলাম, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।