বিদেশে পাঠানোর নামে কোটি টাকা হাতিয়েছেন তারা

পিবিএ,ঢাকা: বিদেশে লোক পাঠানোর নামে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অফিস নিতো। এরপর সেই ঠিকানা ব্যবহার করে ফেসবুকে বিভিন্ন ছদ্মনাম দিয়ে ভুয়া পেইজ খুলতো। এরপর কথিত ‘আল সাফার ইন্টারন্যাশনাল’ নামের প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া পেইজগুলোতে কুয়েতে উচ্চ বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিতো। বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হয়ে সাধারন লোকজন যোগাযোগ করলে তাদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করতো।

এরপর তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সীম বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যেত। এমনকি প্রতারণার উদ্দেশ্যে চক্রের সদস্যরা লিঙ্গও পরিবর্তন করেন।

প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ করা এমন একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন:- মো. শরিফুল ইসলাম (৪২), আবরার জাওয়ার তন্ময় ওরফে রেজাউল করিম রেজা ওরফে হৃদি মাহাজাবিন (২৬) ও আহিয়ান শিশির ওরফে কামরুজ্জামান শিশির (২৯)।

শুক্রবার গভীর রাতে রাজধানীসহ বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম।

গ্রেফতারকৃদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪০টি পাসপোর্ট, ৯টি জাল ভিসা, জাল ভুয়া বিএমইটি কার্ডের ফটোকপিসহ মোবাইল ও সীম উদ্ধার করা হয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত ৭ আগস্ট গুলশান থানায় প্রতারণার একটি মামলা হয়। ওই মামলা তদন্তকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বান্দরবান জেলার নাইক্ষংছড়ি এলাকা থেকে চক্রের মূলহোতা ও এজাহারনামীয় আসামী শরিফুল ইসলামকে শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে গ্রেফতার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যে একই চক্রের সক্রিয় সদস্য এজাহারনামীয় আসামী আবরার জাওয়ার তন্ময়কে ও আহিয়ান শিশির প্রকাশ কামরুজ্জামান শিশিরকে একই দিন রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রতারক চক্রটি বিদেশে লোক পাঠানোর নামে আল সাফার ইন্টারন্যাশনাল নামে গুলশান-১ একটি অফিস খোলে। ওই অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে ফেসবুকে বিভিন্ন ছদ্মনাম দিয়ে ভুয়া পেইজ খুলে এবং ফেইসবুক পেইজগুলোতে বিজ্ঞাপন দিয়ে কুয়েতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারন মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করে। পরে তারা তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সীম বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।

চক্রটি মূলতঃ ছদ্মনাম ব্যবহার করে এবং অন্যের এনআইডি দিয়ে মোবাইল সীম তুলে প্রতারণা করছিলো।

এছাড়াও চক্রটি কুয়েতের আরবীতে লেখা বিভিন্ন ব্যক্তির সঠিক ভিসা কপি সংগ্রহ করে এবং একটি সঠিক ভিসা নম্বর ব্যবহার করে ফটোশপের মাধ্যমে বিদেশগামী ব্যক্তির নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য সংযুক্ত করে কুয়েতের জাল ভিসা তৈরি করে। ওই জাল ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে বিদেশগামী ব্যক্তিরা বিভিন্ন টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে ৩ দিনের ট্রেনিং সম্পন্ন করে সার্টিফিকেট গ্রহণ করতো। পরে ওই জাল ভিসা, পাসপোর্ট এবং ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেট নিয়ে একজন বিদেশগামী ব্যক্তি প্রবাসী কল্যাণ ও জনশক্তির প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অবস্থিত ফিংগার প্রিন্ট অফিসে ফিংগার প্রিন্ট দেয়ার জন্য যান। কিন্তু কুয়েতের সরকারী ওয়েব সাইটে ভিসা নম্বর চেক করে অ্যাপলিকেশন স্টাটাস এপ্রুভড থাকায় অফিসগুলো থেকে বিদেশগামী ব্যক্তিদের ফিংগার প্রিন্ট গ্রহণ করা হয় এবং স্টাটাস অব বায়ো-ফিংগার এনরোলমেন্ট সাকসেস বলে এককপি যাত্রীদের দেয়া হয়।

এছাড়া প্রতারকরা একটি সঠিক বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স কার্ডের স্ক্যানকপিতে বিদেশগামী ব্যক্তির নাম-ঠিকানা লিখে তা রঙ্গিন কপি প্রিন্ট করে দেখিয়ে বলে যে আপনার বিএমইটি কার্ড কমপ্লিট হয়েছে। এই তথ্য জানিয়ে প্লেনের টিকিট দেখিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে চুক্তি করা পুরো টাকা নিয়ে নেয়। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে চক্রটি অর্ধশতাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. হারুন অর রশীদ বলেন, গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করে একটি প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়েছে। গ্রেফতার শরিফুল ইসলামের নামে বিভিন্ন থানায় প্রতারণার ৪টি, আবরার জাওয়ার তন্ময় প্রকাশ রেজাউল করিম রেজা প্রকাশ হৃদি মাহাজাবিনের নামে ১টি প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মামলা আছে। আবরার জাওয়ার তন্ময় ও কামরুজ্জামান শিশির উভয়ই ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি। প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা লিঙ্গ পরিবর্তন করে হৃদি মাহাজাবিন থেকে আবরার জাওয়ার তন্ময় ওরফে রেজাউল করিম রেজা এবং শারমিন থেকে কামরুজ্জামান শিশির এর পরিচয় ধারণ করে। ডিবির নিবিঢ় তদন্তে তাদের প্রকৃত পরিচয় উদ্ধার হয়েছে।

ডিবির এই কর্মকর্তা বিদেশ যেতে কোনো এজেন্সি সম্পর্কে ভালভাবে যাচাই-বাচাই না করে টাকা-পয়সা লেনদেন না করতে সাধারণ জনগণকে পরমার্শ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন...