রাজন্য রুহানি,জামালপুর: জামালপুরে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পে অধিকৃত জমিতে স্বত্ব না থাকার পরও এক বিধবা নারীর বিরুদ্ধে অধিগ্রহণের চেক দাবির অভিযোগ উঠেছে। জেলা শহরের স্টেশন রোডে অধিগ্রহনের চেক পাওয়ার জন্য একটি সংবাদ সম্মেলন করে আংশিক তথ্য পরিবেশনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অধিগ্রহণ শাখা জানায়, শহরের সিংহজানী মৌজার বিআরএস ৮৩৭৮ ও ৮৩৭৯ নং দাগে জমির পরিমাণ ৩৩.৮১ শতাংশ। ওই জমির মালিক খন্দকার ইলিয়াস মোর্তুজা, তার পাঁচ ভাই ও দুই বোন। সে হিসেবে ইলিয়াস মোর্তুজা পারিবারিক আপোস বন্টনে বিআরএস ৮৩৭৮ নং দাগে ৩.৫৪ শতাংশ এবং বিআরএস ৮৩৭৯ নং দাগে ১.২৯ শতাংশ জমি পান। দুই দাগে ৪.৮৩ শতাংশ জমি পান ইলিয়াস মোর্তুজা। পরে তিনি সেই জমি থেকে ৩ শতাংশ জমি তার স্ত্রী রুনা আলমকে দলিল করে লিখে দেন। তার দলিলে চৌহদ্দি উল্লেখ ছিল না। এরপর সেখানে তিনি একটি দুতলা ভবন নির্মাণ করেন যা অধিকৃত জমির অন্তর্ভুক্ত নয়। সেখানেই তিনি দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করছেন।
এছাড়াও শহরের প্রধান সড়ক সংলগ্ন আরও ২ শতাংশ জমি তিনি আলহাজ আবু সাঈদ নামে একজনের কাছে বিক্রি করে দেন। তার এ হস্তান্তরিত দলিলে স্পষ্টভাবে চৌহদ্দি উল্লেখ থাকায় সে অনুযায়ী তিনি ভোগদখলকার ছিলেন। সে হিসেবে মৃত ইলিয়াস মোর্তুজা জীবিত অবস্থায় ০.১৭ শতাংশ জমি বেশি বিক্রি করেছেন। তার হস্তান্তরিত দলিল অনুসারে আলহাজ্ব আবু সাইদ রাস্তা সংলগ্ন জমিতে দোকান পরিচালনা করে আসছিলেন যা অধিকৃত জমির আওতাধীন। তিনি সে অনুযায়ী অনেক আগে ক্ষতিপূরণ তুলে নিয়েছেন। কিন্ত সে সময় মরহুম ইলিয়াস মোর্তুজার স্ত্রী রুনা আলম কোনো আপত্তি দাখিল করেন নি।
এ বিষয় নিয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় অনেকবার শুনানি হয়। রেজিস্ট্রি বন্টননামা ছাড়াই তার স্বামী জীবদ্দশায় নালিশি জমিতে হিস্যার অতিরিক্ত ভূমি হস্তান্তর করেন। ফলে পরবর্তীতে তার অন্য ভাইবোনরা তাকে ব্যতিরেকে ক্ষতিপূরণ আবেদন করেন। পরে তিনি বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞ আদালতে গেলে বিজ্ঞ আদালত অদ্যবধি সে বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেননি।
আপত্তির প্রেক্ষিতে মিসকেস দায়ের হয়। শুনানি হয় উভয় পক্ষের উপস্থিতিতেই। অধিকৃত জমিতে তার কোন স্বত্ব অবশিষ্ট না থাকায় এবং শুনানি নিষ্পত্তি শেষে আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জমির প্রকৃত মালিকদের অধিগ্রহণের চেক হস্তান্তর করা হয়। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই বা করা হয়নি।
মরহুম ইলিয়াস মর্তুজার স্ত্রী রুনা আলম মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা হচ্ছে পৈত্রিক এজমালি সম্পত্তি। কোনো বন্টননামা নেই। সাঈদ হাজীর কাছে যে জমিটি বিক্রি হয়েছে সেখানে আমার স্বামী বা আমার স্বাক্ষর নেই। তাই আমি জমিটি আমার বলে দাবি করছি। আর আমি নারাজি দেয়ার পরও আমাকে না জানিয়ে চেক বিতরণ করা হয়েছে।’
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শহরের স্টেশন রোডে নিজস্ব বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী অধিকৃত জমিতে স্বত্ব দাবি করে প্রশাসনের কাছে ক্ষতিপূরণ চান। একই সঙ্গে এ অনিয়মে জড়িতদের শাস্তিও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা মাহাবুব হাসান বলেন, ‘এই জমি নিয়ে অনেকবার শুনানি হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুই পক্ষের শুনানি করেছেন। সকলের উপস্থিতিতে সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়। সার্ভেয়ারগণ কর্তৃক যৌথ তদন্ত ও পরিমাপ করা হয়। সমস্ত বিষয় পর্যালোচনাপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’