ভালোবেসে বিয়ে: ১৪ বছরের জেল

পিবিএ, শরীয়তপুর: সুষ্মিতা ও তুষার ভালোবেসে বিয়ে করেন প্রায় দুই বছর আগে। ইতিমধ্যে তাদের কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। কিন্তু এখনো এই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি সুষ্মিতার বাবা-মা। মেয়ে নাবালিকা এই অভিযোগে তার মা অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন। এই মামলায় অপহরণের দায়ে তুষারকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় শরীয়তপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা জজ আ. ছালাম খান। কিন্তু ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তুষারকে খালাস দেওয়া হয়।

রায়ে বলা হয়, আসামি তুষার দাস ওরফে রাজ ভিকটিম সুষ্মিতা ওরফে অদিতিকে অপহরণ করে নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আসামি শিশু সুষ্মিতাকে বিয়ে করবেন এই আশ্বাস দিয়ে অপহরণ করেছেন। যা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

বিচারক রায়ে বলেন, আসামি তুষার ভিকটিমকে ধর্ষণ করেছে মর্মে চাক্ষুস স্বাক্ষী নাই। ভিকটিমের সাথে আসামির দৈহিক মেলামেশা হয়েছিলো কিনা এই মর্মে ২২ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে কোন বক্তব্য দেননি। তবে তিনি তার জবানবন্দির শেষের দিকে বলেন যে, তিনি (সুস্মিতা) স্বেচ্ছায় আসামিকে বিয়ে করেছেন এবং বিয়ের পর আসামির সাথে ১১ দিন ঘর সংসার করেছেন। উভয় পক্ষের স্বীকৃত মতে গত ৩ মে সুষ্মিতা একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। এই কন্যা সন্তানের জন্ম তারিখ পর্যালোচনা করে ধরে নেয়া যায় যে, কমপক্ষে এই কন্যা সন্তান জন্মের ১০ মাস ১০ দিন পূর্বে সে তার মায়ের গর্ভে এসেছিলো।

উপরোক্ত আলোচনায় এই কথা পরিস্কার যে আসামি তুষার ভিকটিম সুষ্মিতার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলো। কিন্তু সেটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় অপরাধ কিনা রাষ্ট্রপক্ষ উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারায় তাকে ওই ধারায় সাজা দেওয়া যায় না।

রায়ের পর গত ২৩ জুলাই তুষারকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তিনি আপিল করেন। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এ আপিলের উপর শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য রয়েছে বলে জানান তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. শিশির মুনির। তিনি বলেন, ভালোবেসে তারা বিয়ে করেছেন। এটা কিভাবে অপহরণের পর্যায়ে পড়ে তা বোধগম্য নয়।

সুষ্মিতা বলেন, আমাদের একটাই অপরাধ আমরা ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আইনের মারপ্যাচে আমাদের জীবন আজ বিপন্ন। স্বামীকে মুক্ত করতে ৮৮ দিন বয়সের শিশু সন্তান নিয়ে আমাকে আদালতের দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। তার আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন বলেন, তুষার বিচার চলাকালে আট মাস জেল হাজতে ছিলো। পরে জামিন পান। এখন তিনি কারাগারে আছেন।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...