‘ফারহাঙ্গে জাদিদ’ উর্দু বাংলা অভিধানের রচয়িতা

মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকির ইন্তেকাল; আল্লামা মাসঊদের শোক

পিবিএ,ঢাকা: রাজধানীর আশরাফুল উলুম তেজগাঁও ঢাকার মুহতামিম ও বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার সহসভাপতি, লেখক, অনুবাদক ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের গবেষক মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)। দুপুরে তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে ২৪ মে সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন তিনি।

সূ্ত্র থেকে জানা যায়, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় নিজ গ্রামে বিকেলে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকী দুই ছেলে ও স্ত্রী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছে ৬০ বছর। ইন্তেকালে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের গ্র্যান্ড ইমাম, শাইখুল হাদীস আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

রোববার (২৪ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো শোকবার্তায় তিনি বলেন, মানুষের জন্ম ও মৃত্যু আল্লাহর পক্ষ থেকেই নির্ধারিত বলে অল্প বয়সে এই প্রতিভাবান আলেম আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছেন। এই মাওলানা বাংলাদেশের বর্তমান শীর্ষস্থানীয় আলেমগণের একজন, তিনি বাংলা ভাষার পাশাপাশি উর্দু-আরবি ভাষায়ও পারদর্শী ছিলেন। প্রতিভাধর, মেধাবী ও যোগ্যতা সম্পন্ন এই চিন্তাশীল আলেম শিক্ষক হিসেবেও সফল ছিলেন।

স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমার সাথে মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকির সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। যখন থেকে আমরা লাজনাতুত তালাবা করি তখন থেকে। মাওলানা ইসহাক ফরীদী, মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া ও মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকিরই লাজনার প্রথম দিকের সঙ্গি। তিনি অত্যন্ত ধীরস্থির, শান্ত, বুদ্ধিমান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারঙ্গম ছিলেন। যে কোন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্তে উপর অটল-অবিচল থাকবেন। আমরা যখন প্রথম আমাদের রাজনৈতিক শাখা খুলি তখন তাকে আহ্বায়ক বানানো হয়েছিল এবং তিনি আমাদের ইসলামি গবেষণা পরিষদের পরিচালনায় ছিলেন। আমরা যখন শহিদবাগে ছিলাম, তখন অনেক আর্থিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, অনেক দিন উপবাসও থাকতে হয়েছে। তবু তাঁকে কখনো অভিযোগ করতে দেখিনি।

মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকির সাহিত্য কর্মে নমুনা উল্লেখ করে আল্লামা মাসঊদ বলেন, তিনি ‘নাজরাতুন নাঈম’ এর মত একটি কঠিন কিতাবের অনুবাদ করছেন এবং ‘ফারহাঙ্গে জাদিদ’ নামে উর্দু বাংলা একটি আধুনিক অভিধান রচনা করেছেন। যা শিক্ষক, ছাত্র, লেখক সবার জন্য উপকারী ও সহায়ক। তিনি অল্পবাসী ও কর্মঠ ছিলেন। যশোর থেকে সিলেট পর্যন্ত আমাদের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে আলেম জনতা ঐক্যের ঐতিহাসিক পথযাত্রায়ও ছিলেন। মোটকথা, তিনি দ্বীনের বহুমুখী খেদমত আঞ্জাম দিয়ে গেছেন।

আল্লামা মাসঊদ বলেন, মাওলানা আবু সুফিয়ান যাকির আরও একটি বিশেষ দিক হলো, আমার সঙ্গে যারা কাজ শুরু করেছিলেন, তাদের অনেকেরই পরবর্তীতে আমার সাথে মতবিরোধ হয়েছে বা আমাকে বুঝতে পারেননি, কিন্তু মাওলানা আবু সুফিয়ান শুরু থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমার ভাবধারার সঙ্গে ছিলেন, উলামায়ে দেওবন্দের মূল ভাবধারার উপর সুদৃঢ়ভাবে কায়েম ছিলেন।

শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আল্লামা মাসঊদ বলেন, পৃথিবী আসলে থাকার জায়গায় নয়। আমাদের প্রিয় নবীজী (সা.)-ও চলে গেছেন। আজ আমরা মাওলানা আবু সুফিয়ানকে হারালাম। আমরা তাঁর জন্য দুআ করি। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাত উচ্চ মাকাম দান করুন। আর তাঁকে হারিয়ে যে ক্ষত তৈরী হয়েছে, যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সে শূন্যতা পূরণে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।
পিবিএ/এএম

আরও পড়ুন...