পিবিএ,ঢাকা: মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপর মার্কারি ডেন্টাল অ্যামালগামের ক্ষতিকর প্রভাবের জন্য দাঁতের চিকিৎসায় দ্রুত এর ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকায়, পরিবেশ অধিদপ্তরের অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর এবং এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোশাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত “মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর মার্কারি ডেন্টাল অ্যামালগামের ক্ষতিকর প্রভাব” বিষয়ক একটি সচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
মার্কারি ডেন্টাল অ্যামালগাম এর ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং মিনামাটা কনভেনশন অন মার্কারি এর জরুরি র্যাটিফিকেশন এর উপর জোর দিয়ে এই কর্মশালায় বিশেষজ্ঞগণ মত প্রকাশ করেন। এই কর্মশালায় প্রাক্তন সচিব ও এসডো এর চেয়ারপার্সন সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন,“মিনামাটা কনভেনশন এর স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের এখনি মার্কারি অ্যামালগাম ব্যবহার রোধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত”।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ড. এ কে এম রফিক আহমেদ, মহাপরিচালক,পরিবেশ অধিদপ্তর, অতিরিক্ত সচিব,পরিবেশ,বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়।অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সম্মানীয় অতিথি- ড. হুমায়ন কবির বুলবুল,মহাপরিচালক, বি ডি এস; বিশেষ অতিথি- পরিবেশ, বন, জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ড. এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান এবং মেজর জেনারেল ড. গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরী; মাসুদ ইকবাল মোঃ শামীম প্রকল্প পরিচালক, এমআইএ প্রকল্প, পরিবেশ অধিদপ্তর; এসডো মহাসচিব, ড. শাহরিয়ার হোসেন ও এসডো নির্বাহী পরিচালক, সিদ্দিকা সুলতানা ও বি ডি এস এর নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ডেন্টাল প্রফেশনালস।
মার্কারি ডেন্টাল অ্যামালগাম বা সিল্ভার ফিলিং মূলত দাঁতের ক্ষয় রোধের জন্য ব্যবহার করা হয় যা মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। সাম্প্রতিককালে ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন মানব স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক দশটি উপাদানের মধ্যে মার্কারিকে চিহ্নিত করেছে। দাঁতের চিকিৎসায় সিল্ভার অ্যামালগাম ব্যবহারের পর প্রথম চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই মার্কারি নির্গত হয় যা গর্ভবতী ও শিশুদের কিডনি ও ব্রেইনের মারাত্মক ক্ষতি করে। উপরন্তু ডেন্টাল অ্যামালগাম থেকে নির্গত মার্কারি পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বি ডি এস এর মহাসচিব, ড. হুমায়ন কবির বুলবুল মিনামাটা কনভেনশন অন মার্কারি এর দ্রুত র্যাটিফিকেশনের জন্য গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, “২০২০ সালের মধ্যে মার্কারি ডেন্টাল অ্যামালগাম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। মার্কারির দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার মানুষের স্বাস্থের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দাঁতের চিকিৎসায় মার্কারির রোধ করার জন্য সুশীল সমাজের এগিয়ে আসা উচিত”। তিনি আরও বলেন ২০১৮ সাল থেকেই বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি গর্ভবতী ও শিশুর দাঁতের চিকিৎসায় মার্কারির ব্যবহার করছে না। তিনি উল্লেখ করেন, “২০২০ সালের মধ্যে ডেন্টাল অ্যামালগামের ব্যবহার বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি এবং এসডো যৌথভাবে কাজ করছে।বাংলাদেশে ডেন্টাল অ্যামালগাম এর আমদানি, বিক্রি এবং ব্যবহার বন্ধের দাবিতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি”।
মেজর জেনারেল ড. গোলাম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “মার্কারি শুধুমাত্র মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য নয় পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। ইতিমধ্যে অধিকাংশ দেশেই মার্কারি অ্যামালগাম এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে আছে। ভবিষ্যৎ জীবন সুরক্ষিত করার জন্য দাঁতের চিকিৎসায় মার্কারির ব্যবহার এখনই আইনের আওতায় আনা উচিত। ডেন্টাল অ্যামালগাম শিশু, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মার্কারির প্রতিনিয়ত নির্গমনের ফলে ডেন্টিস্ট, রোগী, স্টুডেন্টসরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মার্কারি অ্যামালগাম এর বিকল্প হিসেবে এখন গ্লাস আয়োনোমার, রেসিন আয়োনোমার ও রেসিন কম্পোজিট সহজলভ্য”।
বিশেষ অতিথি- ড. এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান বলেন, “ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে মার্কারি বিষাক্ত মিথাইল মার্কারিতে পরিণত হয়। আর এই মিথাইল মার্কারি প্লাসেন্টা ও রক্ত কোষের মাধ্যমে দেহে অতিদ্রুত সঞ্চালিত হয় যা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য মারাত্মক হুমকি”।
মাসুদ ইকবাল মোঃ শামীম বলেন, “মিনামাটা কনভেনশন অন মার্কারি, ডেন্টাল অ্যামালগামের ব্যবহার হ্রাস করার একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। যেহেতু বাংলাদেশ এই কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ, সুতরাং মার্কারি অ্যামালগামের ব্যবহার বন্ধে আমাদের আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত”।
অনুষ্ঠানের সভাপতি, ড. এ কে এম রফিক আহমেদ বলেন, “মিনামাটা কনভেনশনের বিধান ও বাংলাদেশের বর্তমান চর্চার মধ্যে এখনও যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। দাঁতের চিকিৎসায় মার্কারির ব্যবহার বন্ধের জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও যথোপযুক্ত আইনের প্রয়োগ”।
সাম্প্রতিককালে জার্মানির বার্লিনে ১০০ এরও বেশি সংস্থা দাঁতের চিকিৎসায় অ্যামালগাম ফিলিং নিষিদ্ধের জোর দাবি জানিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মার্কারি অ্যামালগাম বন্ধের দাবিতে, পরিবেশ অধিদপ্তর ও এসডো যৌথভাবে ১২০ টি ডেন্টাল চেম্বার পরিদর্শন করেছে এবং ৫০০ দন্ত চিকিৎসকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।
পিবিএ/এমএসএম