পিবিএ,বরগুনা: বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত হত্যা মামলার সাক্ষী থেকে আসামি বনে যাওয়া আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন হয়নি হাইকোর্টেও। এর আগেও দুই দফায় মিন্নির জামিন আবেদন বাতিল করেছিলেন বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। বৃহস্পতিবার বিকেলে মিন্নির জামিন আবেদনের শুনানি হয় হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে। আদালতে মিন্নির জামিনের জন্য দেড়ঘণ্টা শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, প্রথমে মিন্নির জামিনের জন্য শুনানি করেন মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা, মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম ও জামিউল হক ফয়সাল প্রমুখ। তারা আদালতকে বলেন, মিন্নি এ মামলার আসামি ছিলেন না। তিনি তার স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে আসামি হয়েছেন। মিন্নি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার স্বামী রিফাত শরীফকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি মিন্নি অসুস্থ এবং একজন নারী। এ সময় মিন্নির আইনজীবীরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা উল্লেখ করে বলেন, মিন্নি অপ্রাপ্তবয়স্ক একজন নারী। তাই এই ধারা অনুযায়ী জামিন পাওয়ার যোগ্য মিন্নি। আইনজীবীরা মিন্নির জামিন মঞ্জুরের জন্য যুক্তিতর্কের মাধ্যমে আদালতকে অনুরোধ জানান।
এ সময় বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির মিন্নির জামিনের তীব্র বিরোধিতা করে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য তুলে ধরেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম, সাইফুজ্জামান ও মোস্তাফা কামাল প্রমুখ। এ সময় তারা আদালতে হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে মিন্নির সঙ্গে হত্যাকারীদের মোবাইল ফোনে কথোপকথনের তালিকার পাশাপাশি ম্যাসেজ আদান-প্রদানের তথ্য তুলে ধরেন। আদালতকে হত্যাকাণ্ডের দিন সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখান তারা। বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, মিন্নি এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এ হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজি, তিন নম্বর আসামি রিশান ফরাজি, ছয় নম্বর আসামি রাব্বি আকন এবং ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া মিন্নি নিজেও রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হয়েছিল এবং সেই বিয়ে বলবৎ থাকার পাশাপাশি বিয়ের তথ্য গোপন করে ধর্মীয় এবং দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে মিন্নি রিফাত শরীফকে বিয়ে করে। এর প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করেন তারা। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের আগের দিন নয়ন বন্ডের বাসায় গিয়ে নয়ন বন্ডের সঙ্গে দেখা করে মিন্নি রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তাই একটি তদান্তাধীন মামলার আসামি মিন্নিকে জামিন না দিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে আদালতকে অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম বলেন, শুনানির সময় যেসব গ্রাউন্ডে আসামিপক্ষ মিন্নির জামিন মঞ্জুরের জন্য আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সেসব গ্রাউন্ডের বিপরীতে পর্যাপ্ত প্রমাণপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি। তাই আদালত মিন্নির কেন জামিন দেয়া হবে না, এজন্য রুল জারি করতে চেয়েছেন। কিন্তু এতে একমত হননি মিন্নির আইনজীবীরা। এজন্য তারা জামিন আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেন। এতে আদালত একমত হলে মিন্নির জামিন শুনানি শেষ হয়। তিনি আরও বলেন, আমরা মিন্নির জামিনের বিরোধিতা করে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পৃক্ততার তথ্যউপাত্ত আদালতে তুলে ধরি। পরবর্তীতে হাইকোর্টের অন্য কোনো বেঞ্চে মিন্নির জামিনের আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
পিবিএ/সাগর আকন/বিএইচ