
পিবিএ,মেহেরপুর: মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার কাজীপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের নারগিছ খাতুন (২৮) নামের এক গৃহবধূ ১৩দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গৃহবধূ নারগিছ নিখোঁজ হওয়ায় তার একমাত্র ছেলে নাঈম হোসেন ও স্বামী সানোয়ার হোসেন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। নারগিছের স্বামী একজন হোটেল কর্মচারি। একমাত্র ছেলে নাইম হোসেন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। দিন আনে দিন খাওয়া সংসার হলেও এক ছেলে নিয়ে তাদের সংসার মোটামুটি ভালো চলছিল। নারগিছ প্রথমে দু’একটি এনজিও থেকে ঋণ তোলা শুরু করেন। সংসারের স্বচ্ছলতার কথা বলে ঋণ তুললেও ওই টাকা দিয়ে নারগিছ বিলাসী জীবন যাপন শুরু করেন। পরে একটা এনজিও’র টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে অপর আরেকটি এনজিও থেকে ঋণ তুলতে হয় তাকে। এক পর্যায়ে একটা-দুটো করতে গিয়ে ৫/৭ টি এনজিও’র কয়েক লক্ষ টাকা ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন নারগিছ। এক পর্যায় এনজিও’র কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে হিমশিম শুরু হয় নারগিছের। আর এনজিওদের কিস্তি পরিশোধ করতেই স্থানীয় মহাজনী সুদখোরদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু হয় তার। মহাজনী সুদখোরদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ এখন প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। এসব কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে স্বামী সানোয়ার নিজ নামের মাঠের দুই বিঘা জমি বিক্রি করে দেন। তারপরেও তার সুদের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। অবশেষে তার নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই বাড়িটাও বিক্রি করে দেন নিজ বোনের কাছে।
ঋণের টাকার জন্য এনজিও কর্মী ও স্থানীয় সুদখোররা প্রতিনিয়ত তার বাড়িতে আসতে থাকায় হঠাৎ চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখে নারগিছ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন।
নারগিছের ভাসুর আনোয়ার হোসেন ও প্রতিবেশী খাইরুল ইসলাম জানান, স্থানীয় সুদখোর ভবানীপুর গ্রামের মহিল শেখের ছেলে মিল্টন হোসেন নারগিছের সাথে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা পাবে বলে দাবি করে আসছিলেন। সুদখোর মিল্টন হোসেন তার বাড়িতে প্রায়ই ঘোরাফেরা করতেন। নারগিছ নিখোঁজ হওয়ার সাথে সাথে মিল্টন হোসেনও দুই তিন বাড়িতে ছিলেন না। পরে সে আবার ফিরে আসেন। তাদের ধারণা সুদখোর মিল্টন হোসেন তাকে কোথাও সরিয়ে রেখেছেন।
তবে অভিযুক্ত মিল্টন হোসেন জানান, আমার কাছ থেকে নেওয়া ৩ লাখ ২০ হাজার সুদের টাকা পরিশোধের ভয়ে সে পালিয়ে গেছে। মিল্টন আরো বলেন,নারগিছ শুধু আমার কাছে নয়, স্থানীয় সুদখোর আজিজুল হকের কাছ থেকে ৫০ হাজার, বাবু হোসেনের কাছ থেকে ১ লাখ, অজদুল হোসেনের কাছ থেকে ৫০ হাজার, সাবু হোসেনের কাছে ৩০ হাজার, টুটুল হোসেনের কাছে ৬০ হাজার, উজ্জল হোসেনের কাছে ৩৫ হাজার, হাসিনা খাতুনের কাছে ১ লাখ ২০ হাজার, হোসরু খাতুনের কাছে ১ লাখ, ভানুয়ারার কাছ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা পয়সা ধার দেনা করেছেন। আমি তাকে নিয়ে যেতে যাবো কেনো। আমিও তাকে খুঁজছি আমার টাকা আদায় করার জন্য। এতো টাকা আপনি দিয়েছেন কেনো এমন প্রশ্নের জবাবে ওই সুদখোর জানান, সবাই দিয়েছে আমিও দিয়েছি। তবে নারগিছ হারানোর ব্যাপারে আমার দোষ দিলে তাকে (নারগিছের স্বামী সানোয়ার হোসেনকে) পিটিয়ে মেরে ফেলবো।
এদিকে নারগিছের স্বামী সানোয়ার হোসেন রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তার স্ত্রী নিখোঁজের ব্যাপারে গাংনী থানায় একটি জিডি করেছেন।
সানোয়ার হোসেন বলেছেন, সে নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন দু’টি সমিতির (এনজিও) কাছ থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা, ও আমার আগের স্ত্রীর ছেলের বিদেশ থেকে পাঠানো ৯০ হাজার টাকাও নিয়ে গেছে আমার স্ত্রী নারগিছ।
স্থানীয় কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর ও ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা আনারুল ইসলাম জানান, নারগিছ হারিয়ে যাওয়ায় সন্দেহের তীর এখন স্থানীয় সুদখোর মিল্টন হোসেনের দিকে। এব্যাপারে আমি নারগিছের স্বামী সানোয়ার হোসেনকে আইনের আশ্রয় গ্রহণের জন্য পরামর্শ দিয়েছি। ইতোমধ্যে সানোয়ার হোসেন গাংনী থানায় একটি জিডি করেছেন।
গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নারগিছ খাতুনের নিখোঁজের খবর পেয়ে ইতোমধ্যে পুলিশি তৎপরতা শুরু করেছে।
পিবিএ/সাহাজুল সাজু/এমএসএম