যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় তালেবান নেতারা!

taliban

পিবিএ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘ বৈরীতার পর সমঝোতায় এসেছেন তালেবান নেতারা। এ সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পাশ্চাত্যের স্বনামধন্য বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও টেলিগ্রাফ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমঝোতার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আইএসআই ও আল কায়েদাসহ আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করতে না দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তালেবান নেতারা। মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তারা এ প্রতিশ্রুতি দেয়। দেশটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর সেখানে ফের সন্ত্রাসীদের স্বর্গ পরিণত হতে পারে বলে এমন আশঙ্কার মধ্যে এমন প্রতিশ্রুতি এলো। অপ্রত্যাশিত হলেও দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে আলোচনা সম্ভব হয়েছে এবং সেই আলোচনা গতকাল বৃহস্পতিবার চার দিনে গড়িয়েছে। বৈঠকের এই দীর্ঘসূত্রতাকে অগ্রগতির আভাস হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথম দুদিনের বৈঠকে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহার এবং দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক তৎপরতা বন্ধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে জড়িত এক তালেবান নেতা বলেন, এছাড়া আলোচনায় দুটি বড় আলোচ্য বিষয় ছিল যুদ্ধবিরতির কৌশল এবং আফগানিস্তানের ভেতরগত একটি সংলাপে প্রবেশের বিভিন্ন উপায় বের করা। বৃহস্পতিবার এ দু’টি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্পর্কিত উপসাগরীয় দেশগুলোর একটি সূত্র জানায়, কাতারের রাজধানী দোহায় আফগান-মার্কিন দুদিনের বৈঠক চতুর্থ দিনে গিয়ে ঠেকেছে, যা খুবই ইতিবাচক দিক। এটিকে তিনি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে আখ্যায়িত করেন। আফগানিস্তানের হাই পিস কাউন্সিলের (এএইচপিসি) সদস্যরাও শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। এএইচপিসি সাধারণত শান্তি প্রক্রিয়ার পর্যালোচনা করে। কিন্তু সরকারের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ নেই তাদের। কাবুলে এএইচপিসির মুখপাত্র এহসান তাহেরি বলেন, যখন বৈঠকে দীর্ঘ সময় লাগছে, তখন বলতে হবে আলোচনা নিশ্চয়ই স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। এতে অংশ নেয়া প্রতিনিধিরা অবশ্যই ইতিবাচক ফলপ্রত্যাশী।

তবে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার প্রস্তাব বারবার নাকচ করে দিয়েছে দেশটি থেকে বিদেশি সেনাদের তাড়াতে লড়াই করা তালেবানরা। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির ভাষায়, আশরাফ গানির সরকার হচ্ছে বিদেশিদের চাপিয়ে দেয়া অবৈধ ও পুতুল সরকার। যুক্তরাষ্ট্রসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলো বলছে, শান্তি প্রক্রিয়া অবশ্যই আফগান নেতৃত্বাধীন ও আফগানদের নিজেদের মধ্যে হওয়া উচিত।

এদিকে আফগান তালেবানের কাতারের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংগঠনটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গণি বেরাদারকে নতুন নেতা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ নিয়োগ দেয়া হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ১৭ বছরের যুদ্ধের অবসানে কৌশল প্রণয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা জোরদার করতে তাকে এ পদে বসানো হয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে পাকিস্তানের কারাগার থেকে ছাড়া পান এ তালেবান নেতা।

এবার তাকে তালেবানের রাজনৈতিক শাখার নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আফগান তালেবানের দুটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বেরাদারের পদ হবে তালেবান নেতা মোল্লা হাবিবুল্লাহ আখুজাদার তৃতীয় সহকারীর। এছাড়া প্রবীণ তালেবান নেতা শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানেখজাইয়ের সঙ্গে কাজ করবেন বেরাদার। ২০১৫ সাল থেকে কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয় পরিচালনা করে আসছেন শের মোহাম্মদ। নতুন শান্তি আলোচনায় একজন তালেবান প্রতিনিধি হিসেবে তিনি আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বিতীয় এক তালেবান নেতা বলেন, শের মোহাম্মদ আব্বাসকে দায়িত্ব দেয়া হলেও তিনি সব সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যখন তাদের আলোচনায় প্রাণ ফিরে এসেছে, তখন জ্যেষ্ঠ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাচ্ছে তালেবান। মূলত আলোচনা ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নিতেই এমন উদ্যোগ। বিবৃতিতে তালেবান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা প্রক্রিয়া সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ ও জোরদার করতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যে তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত জালমি খলিলজাদ। শুক্রবারও আলোচনা চলছে কিনা কিংবা বেরাদার কখন এতে যোগ দেবেন তা জানা সম্ভব হয়নি। তালেবানের এক সিনিয়র নেতা বলেন, বেরাদার দ্রুতই কাতারে উড়াল দেবেন। শান্তি আলোচনায় সিনিয়র নেতাদের চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তাই তাকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

দক্ষিণ আফগানিস্তানের সামরিক অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন বেরাদার। পাকিস্তানের সামরিক নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থার একটি দল ও মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মিলে ২০১০ সালে তাকে আটক করে। খলিলজাদের সঙ্গে তালেবানের উচ্চপর্যায়ের আলোচনার অংশ হিসেবে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গত বছর আফগান বংশোদ্ভূত জালমি খালিলজাদকে তালেবানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির সঙ্গে মার্কিন আলোচনায় গতি আসে।

এ পর্যন্ত তালেবানের সঙ্গে তিনি চারটি বৈঠকে বসেন। যদিও এতে দু’পক্ষের সহিংসতা একেবারেই কমেনি। শান্তি আলোচনার পর আফগানিস্তানের বসে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্র করতে আইএস, আল কায়েদাসহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে যেন সুযোগ দেয়া না হয়, বৈঠকে তালেবানের কাছে মার্কিন আলোচকরা নিশ্চয়তা চেয়েছেন।

ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, তালেবান এতে সম্মত হয়েছে। যদিও ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে আল কায়েদার সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে।

পিবিএ/জিজি

আরও পড়ুন...