পিবিএ,ডেক্স: জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন, জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম থেকে মাধ্যমিক। বেতন আট থেকে দশ হাজার টাকা। কোথাও কোথাও দৈনিক তিন-চার ঘণ্টা পার্টটাইম চাকরির ‘অফার’। এই ‘সোনার হরিণের’ দিকে প্রলুব্ধ হন চাকরিপ্রত্যাশীরাও। সামনে তাদের জন্য পাতা থাকে আরও আকর্ষক জাল। বিজ্ঞাপনে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে মধুর কণ্ঠে এক নারী বলছেন, চাকরিটি বিমানবালাকে আনা-নেয়ার কিংবা নামজাদা কোনো অভিনেত্রীর দেহরক্ষীর কাজ।
এমন চাকরির আহ্বান পায়ে ঠেলা কঠিন অনেকের জন্য। আগ্রহ দেখান তারা। তাদের ডাকা হয় ঢাকার অদূরে সাভারের জামগড়া এলাকায়। সেখানে তাদের ভর্তি করে নেয়া হয় একটি সিকিউরিটি গার্ড প্রতিষ্ঠানে। চাকরিতে ঢোকার আগে তিন হাজার টাকা অফেরতযোগ্য জামানত দিতে হয়। বলা হয়, ১৫ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
১৫ দিন পর যখন অবস্থার পরিবর্তন হয় না, তখন অনেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। কেউবা সারা মাস কাজ করার পর থাকা-খাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে চার-পাঁচ হাজার টাকা পায়। তারাও চলে যায়। এভাবে লোকের আসা-যাওয়ার মধ্যে ব্যবসা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে খাড়াবাধ সিকিউরিটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের মালিক আবু তালিবের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই মেয়েদের (ফোনকারী) আমরা চিনি না। আমাদের লোক লাগলে আমরা বলি, তারা লোক পাঠায়। তারা কী বলে লোক পাঠায় তা তো আর আমরা জানি না।’
তবে লোক নিয়োগের পর ওই নারীদের কমিশন দিতে হয়। আবু তালেব বলেন, ‘নিয়োগের সময় আমরা কারো থেকে পনেরো শ, কারো থেকে দুই হাজার টাকা নিই। এইডা যারা লোক পাঠায় তাগো দিয়া দেই।’
আবার দেড় থেকে দুই হাজার টাকা নাকি নাইটগার্ড হিসেবে নিয়োগ দেওয়াদের পোশাকের জন্য খরচ করা হয়। কিন্তু চাকরি ছেড়ে যাওয়ার সময় কাউকে নিজের পোশাক নিতে দেওয়া হয় না। নতুন শিকার যারা আসে তাদের দেওয়া হয় এই পোশাক, বিনিময়ে পনেরো শ টাকা। এক পোশাকে আয়ের চক্র চলতে থাকে।
জানা যায়, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন যারা দিচ্ছে তারা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত নন। খাড়াবাধ সিকিউরিটি সার্ভিসের মতো শতাধিক প্রতিষ্ঠানে এভাবে জনবল দেয়ার কাজ করে ওই নারীরা। তারা নিজের খরচে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন এবং লোক নিয়োগের পর প্রতিষ্ঠান থেকে কমিশন নেন।
গণপরিবরহণ কিংবা গণমাধ্যম- মানুষের প্রতিদিনের জীবনে জড়িত গভীরভাবে। আর এই দুই জায়গায় দেখা মেলে এসব বিজ্ঞাপন। গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গণপরিবহণের সহজলভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করছে বেশ কিছু মানুষ। আর তাদের পাতা ফাঁদ ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।
পিবিএ/এমএসএম