পিবিএ,ঢাকা: করোনাভাইরাস দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে সবার নজর করোনাভাইরাস প্রতিরোধের দিকে। এ ভাইরাসের সংক্রমণরোধে ক্ষমতাসী দল আওয়ামী লীগ এবং দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহণ করেছে। কিছু দিন আগেও রাজনৈতিক নেতারা একে অপরকে ঘায়েল করতে তিরস্কার করে কথা বলেছেন। এখন দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে। মোটকথা দলের আদর্শ ভিন্ন থাকলেও করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে সবাই একই সুরে কথা বলছেন।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি দলমত নির্বিশেষে দেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনাভাইরাস মোকাবিলাও একটি যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার প্রধানতম দায়িত্ব ঘরে থাকা। আমরা সবার প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হব ইনশাল্লাহ। ঘরে বসেই সচেতনতার মাধ্যমে করোনার বিরুদ্ধে সবাই মিলে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান সরকারের এই মন্ত্রী।
বিএনপির মাহসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মরণঘাতী করোনাভাইরাসের উদ্বেগের মধ্যে কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির খবর দেশবাসীর জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির। করোনাভাইরাসের কারণে দেশে এখন সংকটকাল চলছে। সবার মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে। তিনি এই দুর্যোগকালে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং নেতাকর্মীদের সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সমগ্র বিশ্ব বর্তমানে মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন। করোনাভাইরাস একটি অজানা রোগ। এই ভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনাভাইরাস আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে সমগ্র বিশ্ব মানবতা একই পরিবারভুক্ত। এখানে কেউ নিজেকে আলাদা করতে পারবে না।
সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক কর্তব্য ও দায়িত্ব রয়েছে। সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য হচ্ছে মানুষকে করোনাভাইরাসের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা। আরও আগে থেকেই সরকারের প্রস্তুতি নেয়া উচিত ছিল। এখন শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে বসে থাকলেই আমাদের চলবে না। আমাদের প্রথম কাজ হলো পরস্পর থেকে দূরে থাকা।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু করোনাভাইরাসকে মহাদুর্যোগ বলে আখ্যায়িত করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা ৫৩ এর উপধারা (১) অনুযায়ী বন্ধুরাষ্ট্র ও দেশ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে করোনাভাইরাস টেস্টের কিটসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ-সরঞ্জাম সহযোগিতা হিসেবে গ্রহণের জন্য তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জনান। এ ছাড়া তিনি ঝুঁকি প্রবণ এলাকা সমূহকে ‘দুর্গত এলাকা’ ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল’ সক্রিয় করার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানান। একই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে, বিশেষত সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও গ্রুপ সক্রিয় করার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এই মুহুর্তে গোটা দেশ ও বিশ্ব একটি আতঙ্কের মধ্যে আছে। জাতীয় ক্রাইসিস এবং বয়স বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। সংবিধান ও আইনি দিক যথাযথভাবে মেনে, বয়স বিবেচনা ও মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তিনি আশা করেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি ভালোভাবে দেখবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, এই কঠিন সংকটকালে তারেক রহমান যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন, যে সব প্রস্তাব দিয়েছেন, দাবি জানিয়েছেন তা কার্যকর হলে ও অনুসরণ করলে করোনা মোকাবিলা সহজসাধ্য হবে ইনশাল্লাহ। সবাই মিলেই করোনার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। তিনি ডাক্তারসহ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের কাজকে অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা এবং বিশেষ বোনাস প্রদান, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিক্যাল সরঞ্জাম, পিপিই, করোনা টেস্ট কিট সরবরাহ করে দেশের প্রতিটি উপজেলায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রবীণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের চিকিৎসা সেবায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষি শ্রমিক, গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানার শ্রমিক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আর্থিক সহায়তার উদ্দেশে দ্রুততার সঙ্গে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সভাপতি বদরুদ্দীন উমর করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি হিসেবে ঘোষণার পর দেশে দেশে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় বিভিন্ন রাষ্ট্র জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাই বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশকেও জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করতে হবে। সব দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এই ভাইরাস মোকাবিলায়। এ ছাড়া সরকারের কাছে তিনি জরুরি ভিত্তিতে ৪০ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছেন।
পিবিএ/এমআর