লিবিয়ায় মাগুরার ২ জন লাশ, শোক আর ঋণের চাপে শুধুই হাহাকার

পিবিএ,মাগুরা: লিবিয়ায় মানবপাচারকারীর গুলিতে নিহত হতাহতদের মধ্যে মাগুরার ২ যুবক রয়েছে। তাদের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুরের নারায়নপুর গ্রামে। দু’জনের মধ্যে একজনের নাম লাল চাদ (৩০)। সে মহম্মদপুরের বিনোদপুরের নারায়নপুরের ইউসুফ মিয়ার ছেলে। লাল চাদ মানবপাচারকারীদের গুলিতে নিহত হয়েছে। একই গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে তারিকুল ইসলাম (২২) নামে আরেক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
শনিবার সরেজমিনে লাল চাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছেলেকে হারিয়ে লাল চাদের মা-বাবা ছেলের শোকে বিলাপ বকছেন। লাল চাদের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তার পরিবারের কান্না থামছে না। স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
নিহত লাল চাদের বাবা ইউসুফ মিয়া বলেন,‘সঞ্চয়কৃত টাকা না থাকায় গরু বিক্রি, ধার নেয়া এবং নিজস্ব সব জমি বন্ধকির মাধ্যমে ৮ মাস আগে হাজী কামাল নামে এক দালালের মাধ্যমে লাল চাদ লিবিয়ায় যায়। এ জন্য নারায়নপুরের জিয়াউর রহমান নামে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে ঢাকার হাজী কামালকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। হাজী কামালের ঢাকায় গুলশানে অফিস আছে। লিবিয়ায় যাবার পর লাল চাদকে মিজদা শহরের একটি ক্যাম্পে আটকে মুক্তিপণের জন্য বাড়িতে যোগাযোগ করতো সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া নির্যাতন করতো। গত বুধবার মোবাইলে ভিডিও কলে সর্বশেষ কথা হয়েছে লাল চাদের সাথে। সে সময় সে তাকে নির্যাতনের কথা জানিয়েছিল। পাশাপাশি পরদিন বৃহস্পতিবার মিজদাহ থেকে রাজধানী ত্রিপোলীতে পাঠানো হবে জানিয়েছিল। ওইদিনই গুলিতে লাল চাদ নিহত হয়। যে খবর পরদিন শুক্রবার লিবিয়ায় থাকা একই গ্রামের জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে জানতে পারি। অনেক আশা নিয়ে একদিকে সম্পত্তি শেষ করে ছেলেকে বিদেশ পাঠালাম। আশা পূরণ তো হয়নাই। আরেক দিকে ছেলেকে হারালাম’।
লাল চাদের ছোট ভাই নাসিরুল জানান, চার ভাই তিন বোনের মধ্যে লাল চাদ ছিলো সবার বড়। বাবা অনেক কষ্ট করে তিন বোনের বিয়ে দিলেও ধার দেনা করে সংসার চালাতে হতো বাবাকে। এ অবস্থায় তাদের বড় ভাই সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশ যাওয়ার। ধার দেনা বন্ধকির মাধ্যমে টাকা জোগার করে ভাইকে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। গত ৯ মাসে ভাই একটি টাকাও পাঠাতে পারেনি। ঋণের টাকার সুদের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এদিকে ভাইকে হারিয়ে আরো নিঃস্ব হয়ে গেলো তারা।
লাল চাদের লিবিয়া সঙ্গী তারিকুলের বাবা ফুল মিয়া জানান, তার ছেলে তারিকুলকে জিয়াউর রহমান ও গুলশানের ওই দালাল হাজী কামালের মাধ্যমে লিবিয়ায় কাজের জন্য পাঠানো হয়। এ জন্য ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে হাজী কামালকে। লিবিয়া যাবার পর মিজদা শহরে আব্দুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির ক্যাম্পে আটকে মোবাইল ফোনে তাদের কাছে লালচাদ ও তারিকুলের জন্য ১০ লাখ টাকা করে অতিরিক্ত টাকার মুক্তিপণ দাবি করছিল সংশ্লিষ্টরা। তারা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন। এরই মধ্যে এ ঘটনা ঘটলো। শুক্রবার রাতে ভিডিও কলে তারিকুলের সাথে তার কথা হয়েছে। এ সময় সে লালচাদের মৃত্যুর খবর দেয়। পাশাপাশি নিজে গুলিবিদ্ধ বলে জানায়। তারিকুল সবার কাছে দোয়া চেয়েছে।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানূর রহমান জানান, তিনি হতাহতদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসক ড.আশরাফুল আলম বলেন,‘অবৈধভাবে বিদেশ যাবার ক্ষেত্রে প্রত্যেক জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রবাসী কল্যাণ শাখায় ভিসার যথার্থতা যাচাই বাছাইয়ের ব্যবস্থা আছে। নিশ্চিত না হয়ে এ ধরনের বিদেশ গমন ও মর্মান্তিক মৃত্যু দুঃখজনক’।

পিবিএ/মোখলেছুর রহমান/এমআর

আরও পড়ুন...