পিবিএ,স্বজন ইসলাম,গাইবান্ধা: ফুলছড়ি ইউনিয়নের বাজে ফুলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে কোন শহীদ মিনার নেই। তাই এবার মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর কোনো আয়োজনও নেই বিদ্যালয়ে। কথা হয় বিদ্যালর মাঠের এক কোণে বসে থাকা শিক্ষার্থী সজীব মিয়ার সাথে। তাদের বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার নেই বলে একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে না। এমনকি বইয়ের পাতায় দেখলেও বাস্তবে শহীদ মিনারের আকৃতি কেমন তারা তা জানেনা।
পার্শ্ববর্তী গজারিয়া ইউনিয়নের জমিলা আক্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজু মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, তাদের বিদ্যালয়ের আশেপাশে শহীদ মিনার না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রফিক, শফিক, বরকতসহ ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে না। কেবল আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে শহীদ দিবসের আয়োজন। এছাড়া ফজলুপুর ও ফুলছড়ি ইউনিয়নে কোন শহীদ মিনার নেই। যার কারণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসে ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারে না এ দুই ইউনিয়নের শিশু-কিশোর ও এলাকার মানুষ। শুধু তাই নয়, শহীদ মিনার না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা ভাষা সৈনিকদের ইতিহাস থেকে বঞ্চিত। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে যেমন তাদের কোন ধারণা নেই তেমনি শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানেনা শহীদ মিনার দেখতে কেমন।
ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মন্ডল বলেন, তার ইউনিয়নের একমাত্র শহীদ মিনারটি নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ায় নতুন করে আর শহীদ মিনার নির্মান করা সম্ভব হয়নি। ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হানিফ প্রামাণিক বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে তাদের ইউনিয়নের নামকরণ করা হলেও এই ইউনিয়নে কোন শহীদ মিনার কিংবা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়নি। ফলে চরাঞ্চলে একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে ইউনিয়নের মানুষ শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে না। এর ফলে নতুন প্রজন্ম দেশের গৌরব গাঁথা ইতিহাস সম্পর্কে অন্ধকারে থাকছে।
ভাষা আন্দোলনের পর ৬৮ বছর কেটে গেলেও শতভাগ তো দূরের কথা ফুলছড়ি উপজেলার পাঁচভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার। এসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ আছে কিনা তাও জানা নেই। নদী বেষ্টিত গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১২৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৩ টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ৬ টি কলেজ রয়েছে। এ উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি ও এনজিও পরিচালিত প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শহীদ মিনার আছে ৯ টি প্রতিষ্ঠানে। এর মধ্যে এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের জিগাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জিগাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মিলে একটি, উড়িয়া ইউনিয়নের গুনভড়ি সরকারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গুনভড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মিলে একটি এবং গজারিয়া ইউনিয়নের গণকবর এলাকায় আছে একটি শহীদ মিনার। কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি, কঞ্চিপাড়া ২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি এবং মুক্তিযোদ্ধা মোড়ে আছে একটি শহীদ মিনার। উদাখালী ইউনিয়নের নাপিতের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি, গলাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গলাকাটি উচ্চ বিদ্যালয় মিলে একটি এবং উদাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উদাখালী উচ্চ বিদ্যালয় মিলে আছে একটি শহীদ মিনার।
বুড়াইল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ইব্রাহিম আকন্দ সেলিম বলেন, বুকের তাঁজা রক্ত ঢেলে দিয়ে যারা মায়ের ভাষা ছিনিয়ে এনেছে সেই বীর শহীদরা যথাযথ সম্মান থেকে বঞ্চিত হবে, নতুন প্রজন্ম তাদের শ্রদ্ধা জানাতে পারবে না, শহীদ মিনার চিনবে না এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু রায়হান দোলন বলেন, যেসব ইউনিয়নে শহিদ মিনার নেই সেখানে দ্রুত শহিদ মিনার নির্মানের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হবে।
পিবিএ/স্বজন ইসলাম/বিএইচ