আইন মন্ত্রণালয় মতামত না দেওয়ায় ইশরাকের গেজেট প্রকাশ

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সময়ে মতামত না দেওয়ায় আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে আমরা ইশরাক হোসেনের গেজেট প্রকাশ করেছি।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) চতুর্থ ‘কমিশন সভা’ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

গত ২৭ এপ্রিল ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে ইসির গেজেট প্রকাশের পরের দিন আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন আমাদের মতামত চাইলেও মতামত দেওয়ার আগেই গেজেট প্রকাশ করেছে। গেজেট প্রকাশ করা যাবে নাকি আপিল করতে হবে সে বিষয় নিয়ে আমরা ভাবছিলাম। কেননা, মামলার ক্লেম পরিবর্তন করলে গেজেট প্রকাশ করা যায় না। তিনি (ইশরাক) তো ক্লেম পরিবর্তন করেছেন।

বিষয়টি উত্থাপন করা হলে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আমাদের ওপর বাধ্যবাধকতা ছিল ১০ দিনের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করার। আমরা নিষ্পত্তি করেছি। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে মতামত চেয়েছিলাম। ২৫ এপ্রিল ছিল দশম দিন, ওইদিন ছিল শুক্রবার। আমরা দুই দিন সময় নিয়েছিলাম। রোববার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করেছি। যেহেতু রিপ্লাইটা পাই নাই, তাই আদালতের আদেশের যাতে ব্যত্যয় না হয়, সেজন্য আমরা সেটা বাস্তবায়ন করেছি।

কেন আপিল করেননি-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো সংক্ষুব্ধ পার্টি নই। আদালতের রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে আমরা আপিলে যেতাম। আদালত অন্য একটা ফলাফল বাতিল করে রায় দিয়েছেন আমরা সেটা বাস্তবায়ন করেছি।

গত ২৭ মার্চ ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের ফল বাতিল করে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। একইসঙ্গে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র নির্বাচিত ঘোষণা করে সরকারের গেজেট বাতিল করেন। একই নির্বাচন কমিশনকে ১০দিনের মধ্যে ইশরাক হোসেন গেজেট করার আদেশ দেন।

অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অগ্রহণযোগ্যতার অভিযোগে ডিএসসিসি নির্বাচন ও ফলাফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেছিলেন মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। এ মামলায় তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ আটজনকে বিবাদী করা হয়।

ইশরাক হোসেনের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অগ্রহণযোগ্যতার অভিযোগে আমরা নির্বাচন বাতিল চেয়ে মামলা করেছিলাম। একইসঙ্গে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণার আবেদন করি। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম উত্তরে ও ফজলে নূর তাপস দক্ষিণের মেয়র নির্বাচিত হয়। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের গেজেট প্রকাশ করেন। তারা শপথগ্রহণ করে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ইশরাক হোসেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে।

এর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন আদালতের রায়ে মেয়র ঘোষিত হলে ইসি তার নামে গেজেট প্রকাশ করে। পরবর্তীতে শপথ নিয়ে তিনি এখন দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনিই একমাত্র মেয়র, যিনি কোনো সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে রয়েছেন। ইশরাক হোসেনের গেজেট প্রকাশ হওয়ার এখন শপথ পাঠ করার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। তবে কতদিনের মধ্যে শপথ পাঠ করাতে হবে এ নিয়ে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই।

আরও পড়ুন...