চীনের পথে প্রধানমন্ত্রী

পিবিএ, ঢাকা: ৬ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (০১ জুলাই) বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে তিনি চীনের দালিয়ানের উদ্দেশে রওয়ানা হন।

বিকাল সাড়ে পাঁচটায় চীনের দালিয়ানের উদ্দেশে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেছে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট (বিজি১৭২০)। চীনের স্থানীয় সময় রাত ১২টা ১০মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর দালিয়ান বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে।

সফরকালে তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং বেইজিংয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী লী কেকিয়াং ও প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

আজ চীনের দালিয়ানে তিন দিনব্যাপী ‘ডব্লিইএফ অ্যানুয়েল মিটিং অব দ্য নিউ চ্যাম্পিয়নস-২০১৯’ শুরু হবে, যা ডব্লিউইএফ সামার দাভোস নামেও পরিচিত। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘লিডারশিপ ৪.০- সাকসিডিং ইন এ নিউ এরা অব গ্লোবালাইজেশন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক খান এমপি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং সূত্রে এখবর জানা গেছে।

বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা শেষে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীকে শাংগ্রি-লা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। দালিয়ান সফরকালে তিনি এ হোটেলেই অবস্থান করবেন।

২ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রী দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠেয় ডব্লিউইএফ সামার দাভোস সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিবেন।

শেখ হাসিনা দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লস শোয়াবের কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং বিকালে ‘কো-অপারেশন ইন দ্য প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন।

বিকালে দালিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে শোয়াবের দপ্তরে অনুষ্ঠেয় ‘কো-অপারেশন ইন দ্য প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

আগামী ৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী চীন সরকারের সরবরাহকৃত একটি বিশেষ ভাড়া করা বিমানে স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় বেইজিংয়ের উদ্দেশে দালিয়ান ত্যাগ করবেন। একই দিন বিমানটি স্থানীয় সময় বেলা ১২টা ২৫ মিনিটে বেইজিং ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে পৌঁছবে।

বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে দিয়ায়োতাই স্টেট গেস্ট হাউজে নিয়ে যাওয়া হবে। চীনের রাজধানীতে সফরকালে শেখ হাসিনা এই হোটেলেই অবস্থান করবেন।

বিকালে তিনি বেইজিংয়ের লিজেনডাল হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক সংবর্ধনা ও নৈশভোজে যোগ দিবেন।

৪ জুলাই সকালে শেখ হাসিনা স্বাগত অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপলে বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

পরে তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।

প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত এক ভোজসভায় অংশ নিবেন।

একই দিন বিকালে শেখ হাসিনার সিসিপিআইটিতে চীনা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একটি বিজনেস গোল টেবিল বৈঠকে অংশ নিবেন।

৫ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রীর চাইনিজ থিংক ট্যাংক ‘পাঙ্গোয়াল ইনস্টিটিউশন’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে।

চীনের বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাগণ শেখ হাসিনার সঙ্গে তার হোটেল স্যুটে দেখা করার কথা রয়েছে এবং এনপিসি’র চেয়ারম্যান লি ঝাংশুর সাথে প্রধানমন্ত্রীর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বিকালে শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দিয়াওইয়ুতাই রাষ্ট্রীয় অতিথিশালায় এক বৈঠকে মিলিত হবেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একই স্থানে চীনা প্রেসিডেন্টের আয়োজিত একটি ভোজ সভায় অংশ নেবেন।

চীন সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী বেইজিং ক্যাপিটাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় ৬ জুলাই সকাল ১১টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন এবং একই দিন বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (এইচএসআইএ) পৌঁছবেন।

চীন সফরকালে বাংলাদেশ এবং চীন অর্থনৈতিক, বিদ্যুৎ, তথ্য প্রযুক্তি এবং পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে আটটি চুক্তি স্বাক্ষর করবে।

এগুলো হচ্ছে-

১. ডিপিডিসি এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহের সম্প্রসারণ এবং শক্তিশালীকরণে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি।

২. গভর্মেন্ট কনসেশনাল লোন এগ্রিমেন্ট অব এক্সপানশন এন্ড স্ট্রেন্দেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিডিডিসি এরিয়া প্রোজেক্ট।

৩. প্রেফারেন্সিয়াল বাইয়ার্স ক্রেডিট লোন এগ্রিমেন্ট অব এক্সপানশন এন্ড স্ট্রেন্দেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রজেক্ট।

৪. ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অব পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক ষ্ট্রেন্দেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি প্রোজেক্ট।

৫. এগ্রিমেন্ট অন ইকোনমিক এন্ড টেকনিক্যাল কোঅপারেশন বিটুইন দি গভর্নমেন্ট অব দি পিপল’স রিপাবলিক অব বাংলাদেশ এন্ড গভর্নমেন্ট অব দি পিপল’স রিপাবলিক অব চায়না।

৬. মেমোর‌্যান্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) অন দি ইস্ট্যাবলিশমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ওয়ার্কিং গ্রুপ।

৭. এমওইউ এন্ড ইটস ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান অন হাইড্রোলজিক্যাল ইনফরমেশন শেয়ারিং অব ইয়েলো জাংবো/ব্রহ্মপুত্র রিভার।

৮. সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং পর্যটন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...