ছেলের কাটা হাত নিতে মর্গের সামনে অপেক্ষায় বাবা

পিবিএ, ঢাকা: পঞ্চাশোর্ধ দিনমজুর আবুল হোসেন বসে আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের সামনে। সামনেই একটি বাজারের ব্যাগ। পাশে বসে আছেন আরেক স্বজন। আগ্রহ নিয়ে তার কাছে গিয়ে কথা বলে জানা গেলো, ছেলের কাটা হাত নিয়ে মর্গে এসেছেন তিনি। ব্যাগে সেই হাতটিই রয়েছে।
কিসের হাত! কি হয়েছিলো! জানা গেলো তার কাছেই। চিকিৎসাধীন ছেলে রুবেল হোসেনের বাম হাত কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকরা। সেই কাটা হাতটি দাফন করার জন্য নিয়ে যেতে চেয়েছেন বাড়িতে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে কাটা হাতের ময়না তদন্ত ও যাবতিয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য হাতটি নিয়ে এসেছে মর্গে। আর মর্গে এসে মর্গ কর্মচারীদের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি।
তার বাড়ি বগুড়া দুপচাচিয়া উপজেলার মাজিন্দা গ্রামে। পেশায় দিনমজুর তিনি। ছেলে রুবেল হোসেনও (৩০) দিনমজুর, রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবেও কাজ করতেন।
তিনি জানান, গত ১৯/২০ দিন আগে উপজেলার হাট সাজাপুর গ্রামে ১তলা একটি বাড়ির ছাদে রড উঠানোর সময় পাশের তারের সাথে রডের সংস্পর্শে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় রুবেল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেলে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত শনিবার রুবেলকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটে। হাত পা সহ তার শরীরের ৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালেই তার বাম হাতের কনুইয়ের নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। বর্তমানে বার্ন ইউনিটের ৪র্থ তলায় ভর্তি তিনি।
আবুল হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত ছেলের চিকিৎসায় ৪০/৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার পুরোপুরি সুস্থ্য হতে আরো সময় লাগবে বলে ধারণা। হাসপাতাল থেকে বলেছিলো কাটা হাতটি ফেলে দিতে বা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে দিয়ে দিতে। তবে আমাদের ইচ্ছা ছেলের হাতটি বাড়িতেই দাফন করবো। হাত নিয়ে যেতে রাস্তায় যাতে কোনো সমস্যা না হয় এজন্য ময়না তদন্তের জন্য মর্গে নিয়ে এসেছি।
রুবেলের ভায়রা আঃ মমিন জানান, রুবেলের স্ত্রী রেনুকা বেগম। ছেলে ওয়াহেদ (৬) ও মেয়ে লিজা আক্তার (৩)। পরিবারের সকলের মূল দায়িত্ব বহন করতো রুবেল।
তিনি বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার বাম হাত না কাটলে ওখান থেকে ইনফেকশন হয়ে পরবর্তিতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি রয়েছে। এজন্য চিকিৎসকরা তার বাম হাত কনুইয়ের নিচ থেকে কেটে ফেলেছে।
পিবিএ/ এইচএ/জেড্আই

আরও পড়ুন...