
গত (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর দিয়াবাড়ীর ঝাউবন এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা এক তরুনীর (৩০) লাশ উদ্ধার করে তুরাগ থানা পুলিশ। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে পিবিআই অজ্ঞাতনামা মহিলার নাম পরিচয় সনাক্ত করে জানতে পারে তার নাম পারভীন ওরফে ফেন্সি আরা দিনাজপুর জেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের সরকার পাড়া গ্রামের রমজান আলীর কন্যা
উক্ত লাশ সনাক্তের সাথে সাথে পিবিআই তাৎক্ষনিকভাবে তদন্ত শুরু করে তার গ্রামের বাড়িতে তার স্বামী মোমিনুলসহ অন্যান্য আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারে ভিকটিম ফেন্সি এক-দেড় বছর আগে অভাবের তাড়নায় স্বামী সন্তানসহ ঢাকা শহরে চলে আসেন। ঢাকাতে এসে তিনি গুলশান থানার নিকেতনে জনৈক সৈয়দ জসীমুল হাসান এর বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন।
প্রাথমিকভাবে জানা যায় ঘটনার দিন (১ ডিসেম্বর) সকালে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে গৃহকর্মী সৈয়দা সামিনা হাসান (৬০) তাকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রেহার করে। এতে সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তাৎক্ষনিকভাবে জ্ঞান হারায় এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। এ ঘটনায় গৃহকর্তা ও গৃহকর্তী শলাপরামর্শ করে লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে ড্রাইভার রমজান আলী (৪১) এর সহায়তায় প্রাইভেটকারযোগে (গাড়ী নং-২২-৪৫৪৪) তুরাগ দিয়াবাড়ী এলাকায় ঝাউবনে ফেলে আসে।
উক্ত ঘটনা তদন্তকালে আরও জানা যায় ভিকটিম ফেন্সি আরার স্বামী মোমিনুল ঢাকা শহরে রিকশা চালাতেন। ফেন্সি ঐ বাসায় কাজে নেয়ার পর থেকে তিনি তার স্ত্রীর সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারতেন না। এ সংক্রান্তে একদিন তার স্ত্রী ফোনে জানায় তাকে উক্ত গৃহকর্তী মারধর করে আটকে রাখে। এ সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে তিনি গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এরপর তিনি একদিন ঐ বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীর সাথে দেখা করে আসেন। কিন্তু এরপর আর কোন দিন দেখা করতে পারেননি। পরে গত অক্টোবরে তিনি তার গ্রামের বাড়ি চলে যান।
জিজ্ঞাসাবাদে মোমিনুল আরও জানায় ঐ বাসায় তার স্ত্রী কাজ নেওয়ার পর থেকে গৃহকর্তা জসীমুল হাসান (৬৩) প্রতি মাসে তার মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে ১০০০/-(এক হাজার) টাকা করে পাঠাতো। কিন্তু তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে দিতো না। ভিকটিমের একমাত্র সন্তান তার দাদীর কাছে থাকে। উক্ত ঘটনায় ভিকটিম ফেন্সির স্বামী মোমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে তুরাগ থানায় মামলা নং-৪ তারিখঃ-৪ ডিসেম্বর ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন।
উক্ত মামলাটি স্ব-উদ্যেগে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) তদন্তভার গ্রহনপূর্বক পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম কে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলে সে তাৎক্ষনিকভাবে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে এজাহারনামীয় আসামীদ্বয়কে গ্রেফতারে সক্ষম হয় এবং আসামীদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক মামলার সংশ্লিষ্ট আলামত প্রাইভেট কার (গাড়ী নং-২২-৪৫৪৪) একটি লাঠি ও একটি বিছানার চাদর ঘটনাস্থল হতে জব্দ করেন।
পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)-এর জোর প্রচেষ্টায় ঘটনার ৭২ ঘন্টার মধ্যে অজ্ঞাতনামা তরুনীর লাশ সনাক্ত ও মূল আসামী গ্রেফতার এবং আলামত উদ্ধার সম্ভব হয়। আসামীরা জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে।