পিবিএ ডেস্ক: দাড়ি-গোঁফ রেখে পাঞ্জাবি টুপি পড়ে ছদ্মবেশ ধরেও গ্রেফতার এড়াতে পারেননি ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। শুধু তাই নয়, খোচা খোচা দাড়ি ও গোঁফে পুরো চেহারাটা (অবয়ব) পাল্টানোর মতো চেষ্টাও করেন। এতো কিছুর পরও শেষ রক্ষা হলো না ওসি মোয়াজ্জেমের। রোববার (১৬ জুন) ঢাকার উচ্চ আদালত চত্বরের পাশে কদম ফোয়ারার পাশ থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এর আগে দুপুরে কৌঁশলে আদালতে প্রবেশ করে আইনজীবী সালমা ইসলামের মাধ্যমে জামিনের আবেদনও করেন ওসি মোয়াজ্জেম। তথ্য প্রযুক্তি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর আদালত থেকে জামিন নেয়ার আশায় ২০ দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, দেবিদ্বার, দাউদকান্দি আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। পাশাপাশি কুমিল্লা জিলা স্কুলে তার ছেলে অধ্যয়ন করছে বিধায় কুমিল্লা জেলার শহরতলীতে ছেলের বাসায় প্রায় এক সপ্তাহ লুকিয়ে ছিলেন তিনি।
রোববার বিকেলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, হাইকোর্টের কদম ফোয়ারার পাশ থেকে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানায় নেয়া হয়। পরে ফেনীর পুলিশকে খবর দেয়া হয়। যেহেতু মামলা তারা তদন্ত করছেন, তাই তাদের কাছে ওসি মোয়াজ্জেমকে হস্তান্তর করা হবে। রোববার রাতেই বিশেষ পাহারায় তাকে ফেনীর সোনাগাজী থানায় নিয়ে যাওয়া হবে।
জানা যায়, ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম। পরে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও দেন তিনি।
ফেসবুকে ভিডিও ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ১৫ এপ্রিল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। বাদির জবানবন্দি গ্রহণ ও মামলার নথি পর্যালোচনা করে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। এরপরও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তিনি আত্মসমর্পণও করেননি।
পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, গত ৮ মে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন। গত ক’দিন থেকে তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের ঠেলাঠেলি চলছিলো। ঈদের আগে সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হন ওসি মোয়াজ্জেম।
প্রসঙ্গত গত ৬ এপ্রিল এইচএসসি সমমানের আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা নুসরাত জাহান রাফিকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান।
পিবিএ/ এমএসএম